নাগরিকদের চীনা ফোন কেনা থেকে বিরত থাকা এবং পুরোনো ফোনগুলো ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইউরোপের দেশ লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশটির ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা শাওমি এবং হুয়াওয়ের তৈরি ফাইভজি মোবাইল ফোন পরীক্ষায় গ্রাহকের ডেটা সংগ্রহ করে এনক্রিপ্টেড অবস্থায় ভিন্ন সার্ভারে পাঠানো ও সেন্সরশিপ আরোপের প্রমাণ পাওয়ার পর ওই পরামর্শ দিয়েছে।

দেশটির গবেষকরা শাওমির একটি ফোনে বিল্ট-ইন সেন্সরশিপ টুলসের অবস্থান এবং হুয়াওয়ের ফোনকে সাইবার হামলার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করেছেন। কিন্তু হুয়াওয়ে বলেছে, তাদের ফোনে কোনও ব্যবহারকারীর ডেটা বাইরে পাঠানোর সুযোগ নেই। 

লিথুয়ানিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গিরিসি আবুকেভিসাস বলেছেন, ‌আমাদের নতুন চীনা ফোন না কেনার এবং ইতোমধ্যে কেনা ফোনগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

সেন্সরশিপ 

লিথুয়ানিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাওমির এমআই ১০টি ফাইভজি ফোনে একটি গোপন সফটওয়্যার শনাক্ত করেছেন লিথুয়ানিয়ার গবেষকরা। এই সফটওয়্যারের ‘তিব্বত মুক্ত করো (Free Tibet)’, ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা দীর্ঘজীবি হোক (Long live Taiwan independence)’ এবং ‘গণতন্ত্র আন্দোলন (democracy movement)’-এর মতো স্লোগান চিহ্নিত করে সেন্সর করার বিল্ট-ইন ক্ষমতা আছে।

গবেষকরা বলেছেন, শাওমির ফোনের সিস্টেম অ্যাপসে ৪৪৯টি শব্দ বা বাক্যাংশের তালিকা আছে। এর মধ্যে ডিফল্ট ইন্টারনেট ব্রাউজারও আছে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট হয়। ইউরোপে শাওমির ফোনগুলোর সিস্টেম অ্যাপস বন্ধ রাখা গেলেও দূর থেকে যেকোনও সময় সেগুলো সচল করা যায়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলেও কোনও সাড়া দেয়নি শাওমি কর্তৃপক্ষ। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, শাওমির ফোনগুলো এনক্রিপ্টেড ডেটা সিঙ্গাপুরে একটি সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়। লিথুয়ানিয়ার ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার বলেছে, এটি শুধুমাত্র লিথুয়ানিয়ার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশ যারা শাওমির সরঞ্জাম ব্যবহার করে তাদের জন্যও।

চীনা এই স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাশ্রয়ী মূল্যের মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী; যার ফলে এক বছরের আগের তুলনায় তাদের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে রাজস্ব বেড়েছে ৬৪ শতাংশ।

এদিকে, শাওমি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ঢাকা পোস্টের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘শাওমির ডিভাইসগুলো ব্যবহারকারীদের কাছে এবং তার থেকে যোগাযোগকে কোনোভাবেই সেন্সর করে না। শাওমি তার স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত আচরণ যেমন—সার্চ, কলিং, ওয়েব ব্রাউজিং অথবা তৃতীয় পক্ষের যোগাযোগ সফটওয়্যার ব্যবহারকে কখনোই সীমিত বা বন্ধ করেনি এবং করবেও না। সব ব্যবহারকারীর আইনগত অধিকারকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করে ও রক্ষা করে চলে শাওমি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাধারণ তথ্য সুরক্ষা আইনও (জিডিপিআর) মেনে চলে শাওমি।’

এসএস