যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছেন এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ। আরও কমপক্ষে ৫০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে। গৃহযুদ্ধে বিভাজিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির মানবিক সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইয়েমেনের বর্তমান সংকট পরিস্থিতি ‘দ্রুত আরও অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে’ বলে বর্ণনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।  

ইয়েমেনে আগামী কয়েক সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে বলেছেন, দেশটির সরবরাহ ব্যবস্থা এখন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত। খাদদ্রব্যের মূল্য প্রতিনিয়ত আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।   

তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্যদ্রবের মূল্যবৃদ্ধি ও জ্বালানি স্বল্পতা নিয়ে পরিস্থিতি এখন বিপর্যয়কর। দুর্ভিক্ষের দরজায় কড়া নাড়ছে এমন মানুষের সংখ্যা ৫০ লাখ। আরও এক কোটি ৬০ লাখ অনাহারের মুখে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আরও তহবিল না দিলে অক্টোবরের মধ্যে ৩২ লাখ মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।’

ইয়েমেনে ডব্লিউএফপির মুখপাত্র আন্নাবেল সিমিংটন বলেন, ‘ইয়েমেনের মানুষ দুবেলা খাবার জোটাতে পারছে না। খাদ্যসংকট জটিল আকার ধারণ করলেও এর প্রভাব স্পষ্ট। ইয়েমেনি রিয়ালের মান কমে যাওয়া এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ ইয়েমেনিদের পক্ষে দুবেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করা অসাধ্য হয়ে পড়েছে।’  

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা যেভাবে ত্রাণসহায়তা দিচ্ছি, আগামী ছয় মাস এটা অব্যাহত রাখতে হলেও আমাদের আরও ৭৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এছাড়া অক্টোবর থেকে ত্রাণ ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছি আমরা। এছাড়া অতিরিক্ত সহায়তা না আসলে ডিসেম্বরের মধ্যে ৫০ লাখ মানুষকে ত্রাণ দেওয়া বন্ধ হবে।’     

ইয়েমেনে অ্যাকশন ফর হিউমিন্যাটি নামে আরেকটি দাতব্য সংস্থার কর্মী অ্যাডাম কেলউইক বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘নিদারুণ’ বলে বর্ণনা করছেন। গত মঙ্গলবার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সানার একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে আসা কেলউইক বলছেন, ‘ওই হাসপাতালটি ছিল অনাহার আর অপুষ্টিতে ভরা শিশুতে পূর্ণ।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই সমস্ত শিশুদের থাকার জন্য তাদের অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। হাসপাতালটি ছিল কঙ্কালের মতো দেখতে শিশুদের বিছানায় ভরা। এটা ছিল একটা ভয়াবহ দৃশ্য। পরিস্থিতির যে দ্রুত অবনতি হচ্ছে সেটা একদম স্পষ্ট এবং শিশুদের এত মারাত্মক অপুষ্টির কারণ হলো তাদের মায়েরাও অপুষ্টিতে ভুগছে।’

অ্যাডাম কেলউইক আরও বলেন, ‘স্পষ্টতই, এর মানে হল যে তারা (মায়েরা) তাদের শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে অক্ষম এবং এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই দিন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।‘ তিনি বলেন, এমনকি যেসব ইয়েমেনি পরিবারের আয়ের যথেষ্ট উৎস রয়েছে, তারাও একইরকমভাবে ভয়াবহ খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।’

এএস