আফগানিস্তানের নতুন শাসকগোষ্ঠী কট্টর ইসলামপন্থী তালেবানের নিযুক্ত কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) ‌‌‘ইসলামি পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত মেয়েরা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে অথবা কাজে ফিরতে পারবেন না’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

গত ২২ সেপ্টেম্বর পিএইচডি ডিগ্রিধারী ভিসিকে সরিয়ে তালেবান বিএ পাস ডিগ্রিধারী মুহাম্মদ আশরাফ গাইরাতকে নিয়োগ দেওয়ার পর সোমবার এক টুইট বার্তায় তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এই ভিসি বলেছেন, ‌‘যতদিন প্রকৃত ইসলামি পরিবেশ সবার জন্য তৈরি করা সম্ভব না হয়, ততদিন মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বা কাজ করতে দেওয়া হবে না। সর্বপ্রথম ইসলাম।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এই নীতি তালেবান যখন ১৯৯৬ সালে প্রথমবার দেশটির ক্ষমতায় এসেছিল সেই সময়ের প্রতিধ্বনি করছে। ওই সময় শুধুমাত্র পুরুষ সঙ্গী থাকলেই নারীরা জনসম্মুখে অথবা বাড়ির বাইরে আসার অনুমতি পেতেন, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও চাকরিতে তাদের পুরোপুরি নিষিদ্ধ, তালেবানের আদেশ উপেক্ষা করলে মারধর এবং ব্যভিচারের শাস্তি প্রকাশ্যে পাথর নিক্ষেপে হত্যার বিধান কার্যকর করা হয়।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, গত দুই দশকে তুলনামূলক স্বাধীনভাবে কিছু নারী কর্মী কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছিলেন, তারা তালেবানের নতুন আদেশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন। এমনকি তারা ইসলামি বিশ্বাসকে সংজ্ঞায়িত করতে তালেবানের অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী প্রভাষক বলেন, ‘পবিত্র এই স্থানে অনৈসলামিক কোনও কিছুই ছিল না। প্রেসিডেন্ট, শিক্ষক, প্রকৌশলী, এমনকি মোল্লারাও এখানে প্রশিক্ষিত এবং তারা সমাজের জন্য উপহার।’ তিনি বলেন, কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় আফগান জাতির আবাসস্থল।

গত ২২ সেপ্টেম্বর তালেবান কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রিধারী ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) ড. মুহাম্মদ ওসমান বাবুরিকে বরখাস্ত করে বিএ ডিগ্রিধারী মুহাম্মদ আশরাফ গাইরাতকে তার স্থলাভিষিক্ত করে। তালেবানের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৭০ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেন।

কাবুলের সর্ববৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইরাতকে ভিসি নিয়োগের পর দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। সমালোচকরা গত বছর আশরাফ গাইরাতের ‌সাংবাদিকদের হত্যার পক্ষে সাফাই গাওয়া টুইট শেয়ার করে তার সমালোচনা করেন।

তালেবানের আগের সরকারে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন আশরাফ গাইরাত। একই সঙ্গে তিনি আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আইইএ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল্যায়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান ছিলেন।

চলতি মাসে কাবুলের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পর্দা টাঙিয়ে আলাদা বসেন ছাত্র-ছাত্রীরা

এর আগে, দেশটির সরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে তালেবান। আফগান সাবেক প্রেসিডেন্ট বুরহানউদ্দিন রব্বানির নামে প্রতিষ্ঠিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় কাবুল এডুকেশন ইউনিভার্সিটি।

২০০৯ সালে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিজ বাসভবনে নিহত হন আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা বুরহানউদ্দিন রব্বানি। পরে তার নামে কাবুলের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়।

তালেবানের উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আফগানিস্তানের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। এসব বিশ্ববিদ্যালয় কোনও রাজনৈতিক অথবা জাতিগত নেতার নামে হওয়া উচিত নয়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য খামা প্রেস নিউজ এজেন্সি বলছে, তালেবানের সরকারের ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গত দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে ভাষাগত, আঞ্চলিক ও জাতিগত বৈষম্য বিরাজ করছে এবং এমন বৈষম্যের ভিত্তিতেই জাতীয় স্থানগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।

এসএস