যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের বিধি লঙ্ঘনের মিথ্যা অজুহাতে তরুণী সারাহ এভারার্ডকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত দেশটির পুলিশের কর্মকর্তা ওয়েন কুজেন্সকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তার বিরুদ্ধে ভুয়া ওয়ারেন্ট দেখিয়ে ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার লন্ডনের একটি আদালতে এই ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

রায় ঘোষণার সময় আদালতের বিচারক বলেন, এই মামলাটি ধ্বংসাত্মক, মর্মান্তিক এবং একেবারে নৃশংস। কুজেন্সকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, আপনি আপনার পরিবারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং আপনার অনুশোচনার কোনও প্রমাণ নেই।

লন্ডনের আদালতের বিচারক ফুলফোর্ড ‌অপহরণ, ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ‌‘জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মামলার ভয়াবহতা এতটাই ব্যতিক্রমী যে এটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশের নিশ্চয়তা দেয়।

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ব্রিটেনে লকডাউন চলাকালীন গত ৩ মার্চ সারাহ এভারার্ড হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। এ ঘটনায় দেশটিতে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়; সারাহর নিখোঁজের ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। একই সঙ্গে রাস্তায় নারীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

প্রতিবাদের মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করে। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিজাত কূটনৈতিক সুরক্ষা শাখায় কর্মরত ৪৮ বছর বয়সী ওয়েন কুজেন্স গত জুলাইয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সারাহকে অপহরণ, ধর্ষণ এবং হত্যার কথা স্বীকার করেন।

দক্ষিণ লন্ডনের ক্ল্যাফামে এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় সারাহকে করোনাবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ কর্মকর্তা ওয়েন। তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। আলামত ধ্বংস করতে ওই তরুণীর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেহাবশেষ একটি জঙ্গলে ফেলেন দেন ওয়েন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে দায়েরকৃত মামলার শুনানিতে আইনজীবী টম লিটল বলেন, গত ৩ মার্চ মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ ৩৩ বছর বয়সী সারাহকে টার্গেট করেন ওয়েন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন তিনি।

লন্ডনের আদালতের এই আইনজীবী বলেন, ওই ঘটনার সময় দায়িত্বরত ছিলেন না ওয়েন। তিনি সারাহকে ‘ভুয়া গ্রেফতার’র মাধ্যমে অপহরণ করেন। তাকে হাতকড়া পরিয়ে ওয়োরেন্ট কার্ড দেখান তিনি।

পুলিশের নিরাপত্তা ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, সারাহকে গাড়িতে তুলে নেওয়ার আগে পুলিশ কর্মকর্তা ওয়েন ওয়ারেন্ট কার্ড দেখান এবং হাতকড়া পরান। পাশ দিয়ে গাড়িতে করে চলে যাওয়া এক দম্পতি এ ঘটনা দেখেন। তারা মনে করেছিলেন, আন্ডারকাভার কোনও পুলিশ কর্মকর্তা হয়তো কাউকে গ্রেফতার করছেন।

আইনজীবী বলেন, লকডাউন বিধিনিষেধ প্রয়োগকারী ওয়েন তার জ্ঞান এবং পুলিশ টহলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন। কোন ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে হবে তা তিনি জানতেন। সারাহর সাবেক একজন প্রেমিক বলেছেন, সারাহ বুদ্ধিমান এবং তার রাস্তায় চলাচলের জ্ঞান ছিল। জোরাজুরি করে অথবা ভুল বুঝিয়ে কোনও অপরিচিত ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলতে পারতো না।

এসএস