বিশ্বের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য মেলা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘দুবাই এক্সপো–২০২০’র অবকাঠামো নির্মাণকাজে নিয়োজিত তিন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই মেলার নির্মাণকাজ চালাতে গিয়ে ২০১৫ সালের পর থেকে এ নিয়ে ছয় শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে।

প্রথমবারের মতো মেলার আয়োজকরা শনিবার দুবাই এক্সপোর অবকাঠামো নির্মাণকাজে তিন শ্রমিক নিহত ও আরও ৭২ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে স্বীকার করে। এক্সপোর নির্মাণকাজে নিয়োজিত দুই লাখ শ্রমিকের মধ্যে তিনজনের এই প্রাণহানি যুক্তরাজ্যের নির্মাণকাজের দুর্ঘটনার তুলনায় কম বলে সাফাই গেয়েছেন মেলার আয়োজকরা।

নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসে দুবাই এক্সপোর প্রতিনিধি স্কোনাইদ ম্যাকগিয়াচিন বলেছেন, ‌দুর্ভাগ্যবশত কোভিডের কারণে আমাদের তিনজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মহামারী চলাকালীন তাদের প্রাণহানি ঘটেছে।

তিনি বলেন, আগে প্রকাশিত তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে নির্মাণকাজের দুর্ঘটনায়। তবে এখন পর্যন্ত কতজন শ্রমিক কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছেন, সেবিষয়ে জানতে সাংবাদিকদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে দুবাই সরকারের গণমাধ্যম অফিসের মন্তব্য জানতে ই-মেইল করলেও কোনও সাড়া পায়নি।

উপসাগরীয় অঞ্চলের বিশাল বিশাল অবকাঠামো প্রকল্প যেমন— দুবাই এক্সপো এবং ২০২২ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কাতারের নির্মাণযজ্ঞে নিয়োজিত অভিবাসী শ্রমিকদের নিম্ন মজুরি ও কাজের মানহীন পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী সমালোচনা করছে।

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর সময় থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশে সংক্রমণের ঢেউয়ের অন্যতম কারণ ছিল শ্রমিকদের জনাকীর্ণ বসবাসের স্থান। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সীমিত সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। এসব দেশে অনেক শ্রমিক দীর্ঘসময় ধরে কাজ করলেও মজুরি পান অত্যন্ত কম এবং শ্রম শোষণের শিকার হচ্ছেন তারা।
 
এক্সপো-২০২০ বলছে, তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইনি নির্দেশনার তুলনায় কর্মক্ষেত্রের উচ্চমান নিশ্চিত করছে। আইনের ব্যত্যয় ঘটলে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে নিরীক্ষা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপও করা হয়। তবে ঠিক কী ধরনের আইনি ব্যত্যয় ঘটছে সেবিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি এক্সপো কর্তৃপক্ষ।

সংযুক্ত আরব আমিরাত অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও পর্যটন কেন্দ্র দুবাইসহ প্রত্যেকটি রাজ্যের কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর পৃথক কোনও তথ্য প্রকাশ করে না। বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এখন পর্যন্ত দেশটির ৮০ শতাংশের বেশি মানুষকে ইতোমধ্যে টিকার আওতায় আনা হয়েছে।

গত সপ্তাহে শুরু হওয়া দুবাই এক্সপো চলবে আগামী ছয় মাস। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই বাণিজ্য মেলায় আড়াই কোটিরও বেশি বিদেশি অংশ নিতে পারনে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এক্সপোতে যারা প্রবেশ করবেন, তাদের অবশ্যই টিকা নেওয়ার সনদ অথবা করোনা নেগেটিভের প্রমাণ দেখাতে হবে। দুবাই এক্সপোর আয়োজনস্থলেও করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে।

এসএস