উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং তার পরিবারের সদস্যদের শরীরে চীনের তৈরি করোনাভাইরাসের একটি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার জাপানি গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন এক বিশ্লেষক চীনা ভ্যাকসিনে কিম জং উনের আস্থা রাখার খবর দিয়েছেন। 

ওয়াশিংটনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের উত্তর কোরিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হ্যারি কাজিয়ানিস বলেছেন, কিম জং উন এবং উত্তর কোরিয়ার জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতাকে চীনা একটি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে চীনা কোন কোম্পানির ভ্যাকসিন উত্তর কোরিয়ার নেতাকে দেয়া হয়েছে এবং সেটি আদৌ নিরাপদ কিনা সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।

অনলাইন সংবাদমাধ্যম নাইনটিনফর্টিফাইভে লেখা এক নিবন্ধে কাজিনিয়াস বলেছেন, কিম জং উন এবং তার পরিবারের উচ্চ-পদস্থ একাধিক কর্মকর্তা ও দেশটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের শরীরে গত দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে চীনের একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। কিম জং উনকে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সরকার।

মার্কিন চিকিৎসা বিজ্ঞানী পিটার জুনিয়র হোটেজের বরাত দিয়ে কাজিনিয়াস বলেন, চীনের অন্তত তিনটি কোম্পানি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করছে। এই কোম্পানিগুলো হলো সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড, ক্যানসিনোবায়ো ও সিনোফার্ম গ্রুপ।

সিনোফার্ম বলছে, চীনে ইতোমধ্যে তাদের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রায় ১০ লাখ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও এই তিন কোম্পানি তাদের ভ্যাকসিনের শেষ ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল এখনও প্রকাশ করেনি।

তবে কিমের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন নেয়ার ব্যাপারে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ সন্দেহ পোষণ করেছেন। ২০১২ সালে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমানো সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ চই জুং-হান বলেন, এমনকি চীনা ভ্যাকসিন অনুমোদন পেলেও কোনোটিই নিখুঁত প্রমাণিত হয়নি। আর তিনি এই ঝুঁকি (কিম জং উন) নেবেন না। কারণ নানা ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছেন তিনি; যা তাকে পুরোপুরি আইসোলেশনে রেখেছে।

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল ওয়ার্ল্ড পিসের সহযোগী সম্পাদক ও পূর্ব এশিয়া বিশ্লেষক মার্ক ব্যারি বলেছেন, ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে চীনের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পেয়ে তিনি (কিম) খুশি।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির লাগামহীন তাণ্ডব চললেও উত্তর কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে কেউই আক্রান্ত হননি। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অবাধ যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকায় উত্তর কোরিয়ায় প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা নাকচ করে দেয়া যায় না।

গত বছরের ডিসেম্বরে উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশি চীনের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়। এরপর এই ভাইরাস এখন পর্যন্ত বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় উত্তর কোরিয়া। 

গত মাসে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি মাইক্রোসফট জানায়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্ক হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করছে উত্তর কোরিয়ার দুটি হ্যাকার গ্রুপ।

এসএস