ইসরায়েলে তৈরি গোয়েন্দা নজরদারী সফটওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনীতিবিদদের ফোনে আড়ি পাতাকে মানুষের ‘মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

বিষয়টি তদন্তে কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত, পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আরভি রাভিন্দ্রানকে প্রধান করে একটি বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন আইপিএস (ইন্ডিয়ান পাবলিক/সিভিল সার্ভিস) কর্মকর্তা তদন্ত দলের প্রধানের সহকারী হিসেবে কাজ করবেন, এছাড়া ভারতের ন্যাশনাল ফরেনসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকেও রাখা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে।

বুধবার এ বিষয়ক এক ঘোষণায় ভারতের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা বলেন, ‘পেগাসাস কেলেঙ্কারি তদন্তের জন্য আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে; কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত যতখানি এগিয়েছে, তাতে আদালত হতাশ। যদি এই ব্যাপারটিকে কেন্দ্রীয় সরকার বোঝা মনে করে থাকে সেক্ষেত্রে তা স্পষ্টভাবে বলতে পারত তারা।’

‘আজকের পৃথিবীতে, সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের কারণে ব্যাক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন করা যেতে পারে শুধু সেই সময়, যখন জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে; কিন্তু এই অজুহাতে যখন তখন কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের এক্তিয়ার কোনো রাষ্ট্রের নেই, বরং এমন করা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার প্রতিক্রিয়া হয় মারাত্মক।’

‘সর্বোচ্চ আদালত রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়; কিন্তু আদালত এটিও মনে করে- যথেচ্ছভাবে মানুষের ফোনে নজরদারী করা তার ব্যক্তিগত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।’

পেগাসাস প্রযুক্তির সাহায্যে ভারত সরকার সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতাসহ বহু সাধারণ মানুষের ফোনে আড়ি পেতেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুই বছর আগে, ২০১৯ সালে এই অভিযোগ প্রথমবার ওঠার পর সরকার সংসদে জানিয়েছিল, আইনবহির্ভূত কিছু করা হয়নি।

সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম সারির ১৬টি দেশের সাংবাদিকদের এক সংগঠন তদন্ত শেষে জানায়, কীভাবে বিভিন্ন দেশের সরকার এই প্রযুক্তির সাহায্যে সাধারণ নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে ভারতের অনেক বিচারপতি, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, সমাজসেবী, রাজনৈতিক নেতার নাম উল্লেখ করা হয়, যাদের ফোনে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

এই তালিকায় আছেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বিষ্ণু এবং নির্বাচনী কৌশলী প্রশান্ত কিশোরও। ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার পেগাসাসের মাধ্যমে বিরোধী দলীয় রাজনীতিক ছাড়াও দেশটির আরও অন্তত ৪০ সাংবাদিকের ফোনেও আড়িপাতা হয়েছে অথবা আড়িপাতার চেষ্টা করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে সরকারকে আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরযেওয়ালা আজ টুইট করে বলেন, ‘সর্বত্রই ছদ্ম জাতীয়তাবাদ স্বৈরতন্ত্রীদের শেষ আশ্রয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানাই। যদিও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মোদি সরকার দৃষ্টি ঘোরানোর বৃথা চেষ্টা করেছে। সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী।’

এসএমডব্লিউ