পিঁপড়ার বেশিরভাগ প্রজাতির জন্যই একটা কথা প্রযোজ্য। তা হলো- কর্মী হয়ে জন্ম নেওয়া পিঁপড়াকে সারাজীবন কর্মীই থেকে যেতে হবে। তবে ভারতে বাস করা পিঁপড়াদের একটা প্রজাতির কথা ভিন্ন। 

হারপেগন্যাথোস সলটেটর বা ইন্ডিয়ান জাম্পিং অ্যান্ট নামে পরিচিত এই পিঁপড়ারা কর্মী হয়ে জন্ম নিয়েও পরে রানি হওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। এই দলের পিঁপড়াদের রানির মৃত্যুর পর কর্মী পিঁপড়ারা রানি হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে। তখন তাদের মধ্যেও রানির যোগ্যতাগুলো প্রস্ফুটিত হয়।  

মানুষের মতো পিঁপড়াদের সমাজেও কর্মী ও রানির ভূমিকা আলাদা। কর্মীরা যেখানে সাধারণত খাদ্য সংগ্রহ ও প্রতিরক্ষায় ব্যস্ত থাকে, রানির মূল দায়িত্ব থাকে আরও বেশি বেশি কর্মীর জন্ম দেওয়া। 

কিন্তু ইন্ডিয়ান জাম্পিং অ্যান্টদের সমাজে রানির মৃত্যুর পর কর্মী পিঁপড়া যখন সিংহাসনের দাবিদার হয়ে ওঠে তখন তাদের শরীরে কিছু পরিবর্তন আসে। একদিকে তখন তাদের বিষের থলি সঙ্কুচিত হয়ে আসে, অন্যদিকে বড় হতে শুরু করে ডিম্বাশয়। কর্মী পিঁপড়াগুলোর এ অবস্থাকে ইংরেজিতে গেমারগেট বলা হয়। 

পরিবর্তন কেবল বিষের থলি বা ডিম্বাশয়েই শেষ হয় না। পিঁপড়াগুলোর মস্তিষ্কের আকারে পরিবর্তন আসে, হরমোনে পরিবর্তন আসে। এমনকি তাদের আয়ুষ্কালেও পরিবর্তন আসে। কিন্তু ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় পিঁপড়াগুলোর শরীরে এই পরিবর্তন আসে, তা বহুদিন একটা রহস্য হয়েই আছে। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ রহস্য ভেদ করার দাবি করা হয়েছে জীববিজ্ঞানী এবং জিনতত্ত্ববিদদের তরফ থেকে। তারা বলছেন, মস্তিষ্কে কেআর-এইচওয়ান নামে একটি প্রোটিনে পরিবর্তনের ফলেই সাধারণ কর্মী থেকে সিংহাসনের দিকে ছুটতে শুরু করে ইন্ডিয়ান জাম্পিংদের সদস্যরা। 

কেআর-এইচওয়ান নামের এই প্রোাটিনের কাজ হলো মূলত দুটি হরমোনের ডাকে সাড়া দেওয়া। এ হরমোন দুটি হলো জুভেনিল ও একডায়সোন। এরমধ্যে জুভেনিল হরমোনটা বেশি পাওয়া যায় কর্মী পিঁপড়াদের শরীরে, আর একডায়সোন বেশি পাওয়া রানিদের শরীরে। ১০ দিন বয়সী কোনো পিঁপড়ার শরীরে যদি জুভেনিল হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে কেআর-এইচওয়ান প্রোটিনের কারণে ওই পিঁপড়ার শরীরে কর্মীদের বৈশিষ্ট্যগুলো আরও বেশি করে ফুটে উঠবে। আবার ওই একই পিঁপড়ার শরীরে যদি একডায়সোন হরমোনের মাত্রা বাড়িযে দেওয়া হয় তবে বিপরীত কাজ করবে কেআর-এইচওয়ান, যার কারণে পিঁপড়ার মধ্যে রানি রানি ভাব ফুটে উঠবে। গবেষকরা দেখছেন, যদি পিঁপড়ার নিউরন থেকে এই কেআর-এইচওয়ান প্রোটিন মুছে ফেলা হয় তবে কর্মী পিঁপড়াদের আচরণ গেমারগেটদের মতো হয়ে যায়, আর গেমারগেটদের নিউরন থেকে ওই প্রোটিন মুছে দিলে তাদের আচরণ কর্মীদের মতো হয়ে যায়।  

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভিনিয়ায়র জীববিজ্ঞানী শেলি বার্জার বলছেন, কর্মীবাহিনীর বিভিন্ন জিনে প্রভাব রয়েছে এই প্রোটিনের। এই প্রোটিনই কর্মী ও গেমারগেটদের উল্টাপাল্টা আচরণ করতে দেয় না। 

নিউরো সায়েন্টিস্ট আদিরা লিবোয়েফ বলছেন, এই হরমোন শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কে একটা প্রভাব ফেলে। কিন্তু আমরা এখনও জানি না যে, ঠিক কিভাবে এটা হয় অথবা নির্দিষ্ট কিছু জিনের ওপরই কেন এটা প্রভাব ফেলে। এছাড়া ডিম্বাশয় ও শরীরে অন্যান্য অঙ্গে এটা কিভাবে প্রভাব ফেলে সেটা জানতে পারাটাও গুরুত্বপূর্ণ হবে।  

সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে- বহুমাত্রিক আচরণের একটা ধারা পিঁপড়াদের মধ্যে বিদ্যমান। কোন জিন সক্রিয় থাকছে তার ওপর নির্ভর করে একটা পিঁপড়া কোন ধরনের আচরণ করবে। অর্থাৎ পিঁপড়া কর্মী হবে না রানি হবে সেটা মূলত নির্ভর করে তার শরীরে কখন কোন জিন সক্রিয় হচ্ছে বা কোন জিন নিষ্ক্রিয় হচ্ছে। 

সূত্র : পপুলার সায়েন্স। 

এনএফ