নিপাহ ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক বাদুড়

• পরবর্তী মহামারি শুরু হতে পারে নিপাহ ভাইরাসের মাধ্যমে
• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে অতি-সংক্রামক হিসেবে শনাক্ত করেছে
• আক্রান্তদের ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশই মারা যান
• নিপাহ ভাইরাসের কোনও ওষুধ-টিকা আবিষ্কার হয়নি
• এটি মোকাবিলায় কোনও প্রস্তুতি নেই ফার্মা জায়ান্টদের

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে প্রবল প্রচেষ্টা চললেও বিশ্বের বৃহৎ ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট কোম্পানিগুলো পরবর্তী প্রাণঘাতী আরেক মহামারি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয় বলে সতর্ক করে দিয়েছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা অ্যাকসেস টু মেডিসিন্স ফাউন্ডেশন। যুক্তরাজ্য এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে বলে মঙ্গলবার খবর দিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান।

প্রতিবেদনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জয়শ্রী কে লিয়ার চীনে আরেকটি ভাইরাস বিশ্বজুড়ে নতুন মহামারি ডেকে আনতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। এতে বলা হয়েছে, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৭৫ শতাংশের বেশি। এটিই পরবর্তী বড় মহামারি রূপে হাজির হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‌‘নিপাহ ভাইরাস হলো আরেকটি আসন্ন সংক্রামক ব্যাধি; যা বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিপাহ যেকোনও মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পরবর্তী এই মহামারি ওষুধ-প্রতিরোধী সংক্রামক হতে পারে।’

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের তীব্র শ্বাসকষ্ট, এনসেফালাইটিস, জ্বর, মাথা ধরা, পেশির যন্ত্রণা, বমি ভাব হতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ হয়।

বাদুড় নিপাহ ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক। এক বছর আগে বাংলাদেশ এবং ভারতে খেজুরের রস পানে বাদুড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বৈশ্বিকভাবে অন্তত ১৬টি প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধির তালিকা করেছে; সেই তালিকার প্রথম দিকের একটি নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ। ডব্লিউএইচও এই ভাইরাসটিকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য বৃহত্তর হুমকি শনাক্ত করলেও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর এটি মোকাবিলায় কোনও প্রকল্পই নেই, বলছে অ্যাকসেস টু মেডিসিন্স ফাউন্ডেশন।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে সার্স, মার্স ভাইরাসের মতো শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসগুলোকেও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছে। এসব ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলেও।

সংস্থাটি বলছে, এসব ভাইরাস কম সংক্রামক হলেও মৃত্যুর হার কোভিড-১৯ এর তুলনায় অনেক বেশি। সম্প্রতি আমেরিকা, আফ্রিকা এবং ভারতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া মশাবাহিত রোগ চিকনগুনিয়ার তিনটি ওষুধ ও একটি পরীক্ষার কিট তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেগুলো হলো- একটি ওষুধ, একটি ভ্যাকসিন, একটি জীবাণুনাশন নতুন স্প্রে এবং অন্যটি পরীক্ষা কিট। 

জার্মান বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি বায়ারের তৈরি নতুন স্প্রেটি ডেঙ্গু এবং জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও কাজ করবে।

অ্যাকসেস টু মেডিসিন্স ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক বছরের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও কোনও ধরনের প্রস্তুতি না নেয়ায় নভেল করোনাভাইরাস বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প, এমনকি সমাজও কোভিড-১৯ মহামারির জন্য একেবারেই অপ্রস্তুত ছিল।

‘করোনা মহামারির আগে বিশ্বের ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর পাইপলাইনে সংক্রামক এই ব্যাধি নিয়ে কোনও ধরনের প্রকল্পই ছিল না। কিন্তু এটি বিশ্বজুড়ে মহামারি ডেকে আনার কয়েক মাসের মধ্যেই ওষুধ শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েকটি ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলেছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ এর অন্তত ৬৩টি ভ্যাকসিন এবং ওষুধ অনুমোদন পেয়েছে অথবা তৈরির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।’

অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রতিরোধী সুপারবাগের উত্থান এবং অ্যান্টিবায়োটিকের স্বল্পতার কারণে অনেক নিম্ন-আয়ের কিছু দেশ গুরুতর ঝুঁকিতে আছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বিশ্বের প্রধান ২০টি ওষুধ কোম্পানির ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব কোম্পানির অন্তত ৮২টি রোগের ওষুধ নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের দেশগুলোতে সহজলভ্য হলেও অনেক ওষুধ এখনও পৌঁছায়নি।

কোম্পানিগুলো প্রাণঘাতী এইচআইভি, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, কোভিড-১৯ এবং ক্যান্সারের নতুন নতুন ওষুধ তৈরির চেষ্টা করছে।

ওষুধ তৈরির তালিকায় মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট জিএসকে সবার ওপরে রয়েছে। এছাড়াও দেশটির আরেক কোম্পানি ফাইজার শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় রয়েছে; এরপরই আছে নোভার্টিস এবং জনসন অ্যান্ড জনসন।

অ্যাকসেস টু মেডিসিন্স ফাউন্ডেশনটি যুক্তরাজ্য ও ডাচ সরকার, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, ওয়েলকাম ট্রাস্ট এবং অ্যাক্সা ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজারের অর্থায়নে অলাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এই সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে মানুষের ওষুধ প্রাপ্তির অধিকার ও বিভিন্ন রোগ মোকাবিলার কৌশল নিয়ে গবেষণা করে থাকে।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।

এসএস