ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ৬৫ ঊর্ধ্ব বয়সীদের শরীরে প্রয়োগ না করার সুপারিশ করেছে জার্মানির ভ্যাকসিন কমিশন। বৃহস্পতিবার জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটিতে অক্সফোর্ডের টিকা প্রয়োগের ব্যাপারে ভ্যাকসিন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জার্মানির প্রধান স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ রবার্ট কচ ইনস্টিটিউটের (আরকেআই) টিকাদানবিষয়ক স্থায়ী কমিটি ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের শরীরে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পায়নি।

বিবৃতি বলা হয়েছে, ৬৫ ঊর্ধ্ব বয়সী লোকজনের দেহে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ব্যাপারে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। কারণ এই জনগোষ্ঠীর শরীরে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কাজ করে কিনা সেবিষয়ে তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

প্রায় এক মাস আগে অনুমোদন দেয়ার পর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা টিকা ৬৫ ঊর্ধ্বদের শরীরে প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। ভ্যাকসিনের সরবরাহ বিলম্ব নিয়ে ইউরোপের সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার যখন বির্তক চলছে; ঠিক তখনই জার্মানি ভ্যাকসিনটির ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিল।

উৎপাদন চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রত্যাশিত চাহিদা অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করতে পারবে না তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে আমদানির নির্দেশ দেয়া ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) বলেছে, এটি অগ্রহণযোগ্য। ওষুধপ্রস্তুতকারক অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে সরবরাহ বৃদ্ধির উপায় খুঁজতে হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ৩০ কোটি ডোজ আমদানির জন্য কোম্পানিটির সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি করেছে। এছাড়াও আরও অতিরিক্ত ১০ কোটি ডোজ কেনার পরিকল্পনা করেছে ইইউ। 

আগামী শুক্রবার ইউরোপীয় ওষুধ সংস্থা (ইএমএ) ওই অঞ্চলে অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দিতে পারে।

এদিকে, বেলজিয়ামে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদন কারখানায় জটিলতার কারণে ইউরোপে ভ্যাকসিন সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে বলে ব্রিটিশ এই কোম্পানি যে তথ্য দিয়েছে; সেই বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের এই আহ্বানের পর বেলজিয়ামের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ দেশটিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদন কারখানায় তদন্ত শুরু করেছে বলে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ভ্যান্ডেনব্রোকের মুখপাত্র ফ্রান্স ড্যামেল জানিয়েছেন। 

অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের আদ্যোপান্ত

○ উৎপাদনকারী
♦ অ্যাস্ট্রাজেনেকা/অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
• যুক্তরাজ্য
• তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় গড় কার্যকারিতার হার ৭০ শতাংশ

ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই ভ্যাকসিন সস্তায় বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একেবারে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই ভ্যাকসিন সংক্ষরণের সুবিধা থাকায় বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ আশাবাদী। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন পায়।

♦ ভ্যাকসিনের ধরন
• অ্যাডেনোভাইরাস থেকে তৈরি
• মাত্রা: সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ডোজ 

♦ যেসব দেশে অনুমোদন
প্রাথমিক এবং তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল পর্যালোচনার পর যুক্তরাজ্য ডিসেম্বরের শেষের দিকে এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রেও ভ্যাকসিনটির পরীক্ষার ফল পর্যালোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলমান রয়েছে এবং চলতি বছরের শেষের দিকে এটি অনুমোদন পেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

♦ অনুমোদন কবে, কোথায়?

• ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে ভ্যাকসিনটির প্রয়োগ শুরু
• ডিসেম্বর ২৭: যুক্তরাজ্যে প্রয়োগের অনুমোদন
• জানুয়ারি ৩: অনুমোদন দেয় আর্জেন্টিনা এবং ভারত 
• জানুয়ারি: পরীক্ষার ফল পর্যালোচনার পর শুক্রবার অনুমোদন দিতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন
• ২০২১: যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনের প্রত্যাশা 

♦ উৎপাদন

চলতি বছরে যুক্তরাজ্য, ভারত, ব্রাজিলসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে ৩০০ কোটি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ।

♦ বিশ্বজুড়ে বণ্টন

বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে অনুমোদন। সস্তা এবং মজুদের জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রা দরকার হওয়ায় বিশ্বের উন্নয়নশীল বেশিরভাগ দেশে এই ভ্যাকসিন অনুমোদন পেতে পারে। একেবারে নামমাত্র মূল্যে বিক্রির অঙ্গীকার করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

♦ মজুদের জন্য যা দরকার

২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ সুবিধা রয়েছে এই ভ্যাকসিনের।

♦ করোনার বৈশ্বিক চিত্র

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে বিশ্বের ২১৮টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ কোটি ১৬ লাখ ৬২ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ২১ লাখ ৯০ হাজার।

সূত্র: সিএনএন, ব্লুমবার্গ।

এসএস