তালেবান আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। বিশেষত মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে। এমনকি ক্ষমতাগ্রহণের পর কয়েক মাস কেটে গেলেও দেশটির অনেক স্কুলই এখনও বন্ধ।

এর পাশাপাশি প্রিয় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিতে উঠতে না পেরে হাঁপিয়ে উঠেছিল আফগান শিশুরা। অবশেষে বই ভর্তি সেই গাড়ি চালু করার অনুমতি দিয়েছে তালেবান। এরপরই আবার রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে সেই গাড়ি। প্রিয় বইগুলো আবার পড়তে পেরে খুশি কাবুলের শিশুরা। হাসি ফিরেছে তাদের মুখে।

রোববার (৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা এএফপি জানায়, রোববার আফগান রাজধানী কাবুলের একটি এতিমখানায় যায় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির একটি বাস। তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের পর এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম। আর এতেই হাসি ফুটেছে ছোট ছোট শিশুদের মুখে।

১১ বছর বয়সী আরিজু আজিজিও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পেয়ে দারুণ খুশি। তার ভাষায়, ‘আমার সত্যি খুব ভালো লাগছে। আমার প্রিয় বইগুলো আমি আবার পড়তে পারছি।’

প্রিয় বইগুলো হাতে নিয়ে বেশ উত্তেজিত কণ্ঠে সে জানায়, তিন মাস ধরে লাইব্রেরিটি এখানে আসেনি। তবে এখন আসছে।

মোট ৫টি বাস ভাড়া নিয়ে ভ্রাম্যমাণ এই লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু করেছে চারমাগজ নামে একটি সংস্থা। এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেশতা করিম নামে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আফগান স্নাতক।

এএফপি বলছে, নানা সমস্যা ও সংকটে জর্জরিত কাবুলের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব লাইব্রেরি নেই। আর তাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত শত শিশু এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি ব্যবহার করেছে।

কিন্তু তালেবান আগস্টের মাঝামাঝিতে ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনার ডেপুটি প্রধান আহমদ ফাহিম বারাকাতি বলছেন, তালেবান ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে প্রায় সবগুলো স্পন্সরই আমরা হারিয়ে ফেলি।

তিনি আরও বলেন, তবে কয়েক সপ্তাহ আগে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনার অনুমতি দেয় তালেবানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু লাইব্রেরি পরিচালনার জন্য ভাড়া নেওয়া বাসগুলোর মালিক আফগান পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং মাত্র কয়েকদিন আগে এই কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছি। এরপরই এই লাইব্রেরি চালু হয়।

এদিকে লাইব্রেরি চালু হওয়ায় শিশুদের মতো খুশি লাইব্রেরিয়ান রামজিয়া আবদি খলিলও। ২২ বছর বয়সী এই লাইব্রেরিয়ানের ভাষায়, ‘এটি অনেক ভালো অনুভূতি। বর্তমানে স্কুলগুলো বন্ধ। আমরা রাস্তাতেই শিশুদের পড়াচ্ছি। স্কুল বন্ধ থাকায় তাদেরও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ নেই। এভাবে তাদের পড়ার সুযোগ দিতে পেরে ভালো লাগছে।’

লাইব্রেরিতে কোন ধরনের বই আছে সেটি নিয়েও কথা বলেন আবদি খলিল। তিনি জানান, ‘আমাদের এখানে ইসলামিক বই, ইংরেজি বই এবং গল্পের বই আছে। আছে চিত্রাংকনের বই এবং বিভিন্ন ধরনের খেলার বইও।’

টিএম