ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত ও গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির কারাবাসের রায় সম্পূর্ণ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় এবং ‘মানবিক দৃষ্টিকোন’ থেকে ঘোষণা করে হয়েছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন জান্তা। পাশাপাশি, সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে- কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়।

মিয়ানমারের সামরিক সরকারের তথ্যমন্ত্রী মাউং মাউং ওন মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মিয়ানমারের বিচারব্যবস্থা নিরপেক্ষ। (সু চির কারাবাসের) যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে সম্পূর্ণভাবে আইন অনুরণ করা হয়েছে। কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়।’

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি এবং কোভিড-১৯ প্রোটোকল লঙ্ঘনের মাধ্যমে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ভাঙার দায়ে ৭৬ বছর বয়সী সু চিকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি আদালত।

অবশ্য জান্তা সরকার তার গৃহবন্দিত্বের সময় হিসেবে ধরে সাজার মেয়াদ ২ বছরে নামিয়ে এনেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।

অভ্যুত্থানের পর ৭৬ বছর বয়সী গৃহবন্দি সু চির বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দায়ের করে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার। মামলাগুলো যেসব অভিযোগে করা হয়েছে তার মধ্যে, রাষ্ট্রের গোপন তথ্য পাচার, নিয়মবহির্ভূতভাবে ওয়াকি টকি রাখা ও ব্যবহার, ক্ষমতায় থাকাকালে ঘুষ গ্রহণ, নিজের দাতব্যসংস্থার নামে অবৈধভাবে ভূমি অধিগ্রহণ ও করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ায় গাফিলতিসহ উত্তেজনা সৃষ্টি এবং কোভিড-১৯ প্রোটোকল লঙ্ঘনের মাধ্যমে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ভাঙার বিষয়টি রয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতাচ্যুত হলেও মূলত গত জুন থেকে রাজধানী নেইপিদোর বিশেষ সামরিক আদালতে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। সোমবার প্রথম কোনো মামলার রায় ঘোষণা করল আদালত।

জাতিসংঘ অবশ্য অভিযোগ করে বলেছে যে, এই রায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মাইকেল বেশেলেট সোমবার এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত আদালতে একটি ভুয়া বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের যে সাজা ঘোষণা করা হলো- তা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

মঙ্গলবারের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে মূলত তারই সাফাই দিলেন জান্তা সরকারের তথ্যমন্ত্রী।

এদিকে, রোববার মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে একটি সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিটারি ট্রাক উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন।

মঙ্গলবারের ব্রিফিংয়ে মাউং মাউং ওন বলেন, ‘সমাবেশে ট্রাক উঠিয়ে ঘটনাটি একটি দুর্ঘটনা। এটি শুধু দুর্ঘটনাই নয়, বরং দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।’

‘সরকার বিরোধী দুবৃত্তরা তরুণদের বিভ্রান্ত করছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি আইনের মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে।’

মিয়ানমারের বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, গত দশ মাস ধরে দেশটিতে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ২০০’রও বেশি মানুষ।

এসএমডব্লিউ