ছবি: রয়টার্স

চীনের সেনা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার জন্যই নিকট ভবিষ্যতে তাইওয়ানে সর্বাত্মক সেনা অভিযান চালানো সম্ভব হবে না দেশটির পক্ষে। তাইওয়ানের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই দাবি জানিয়েছে দ্বীপ ভূখণ্ডের সেনাবাহিনী।

তাইওয়ান একটি দ্বীপ। তার চতুর্দিক ঘিরে আছে সাগর আর একদিকে তাইওয়ান প্রণালী, যা এই ভূখণ্ডটিকে চীন থেকে ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে।

যদি চীনের সেনাবাহিনী তাইওয়ানে অভিযান চালাতে চায়, সেক্ষেত্রে তাদেরকে জলপথ বা আকাশপথে গিয়ে পৌঁছাতে হবে সেখানে। কারণ, স্থলভাগ চীন থেকে তাইওয়ানে যাওয়ার কেনো উপায় নেই।

প্রতিবেদনে তাইওয়ানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, চীনের সেনাবাহিনীতে বিপুলসংখ্যক সেনা সদস্য থাকলেও পরিবহন সক্ষমতায় ঘাটতি থাকার কারণে একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক সেনাসদস্যকে তাইওয়ানে পাঠাতে পারবে না চীন। এক্ষেত্রে দেশটিকে তাইওয়ানের নৌ ও বিমানবন্দরগুলোর ওপর নির্ভর করতে হবে এবং সেগুলো ব্যবহার করে কয়েক দফায় অভিযান চালানোর মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্য, তাদের রসদপত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে হবে।

আর এই ব্যাপারটিই চীনের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে- উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের সবগুলো নৌ ও বিমানবন্দর সেনাবাহিনীর ব্যাপক সুরক্ষা ও নজরদারির মধ্যে আছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো দখল করা বাইরের কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই যুদ্ধাভিযানের জন্য তাইওয়ানে আসা খুবই, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে চীনের জন্য।’

তাছাড়া, তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করা তাইওয়ান প্রণালী এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিখার মতো কাজ করছে এবং কোনো ক্রমে যদি চীনের সেনা বাহিনী তাইওয়ানে পৌঁছেও যায়, সেক্ষেত্রে প্রণালী ব্যবহার করে সেনা সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো চীনের জন্য প্রায় অসম্ভব হবে বলে জানিয়েছে তাইওয়ানের সেনা বাহিনী।

এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তাইওয়ান প্রণালী- যা এই দেশের জন্য একটি প্রাকৃতিক পরিখা হিসেবে কাজ করছে-সেটি দিয়ে সেনা সদস্যদের জন্য রসদ পাঠানো অসম্ভব হবে চীনের জন্য। কারণ, প্রণালীতে যে কোনো বিদেশী শক্তিকে প্রতিহত করার শক্তি তাইওয়ান সেনাবাহিনীর আছে।’

‘তাইওয়ানের খুব কাছেই যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সামরিক ঘাঁটি আছে। এছাড়া চীনের সীমান্ত ও দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের জলসীমা রক্ষায় চীনকে অবশ্যই তার সেনাবাহিনীর একটি অংশকে নিয়োজিত রাখতে হবে।’

‘ফলে পূর্ণ সামরিক শক্তি নিয়ে তাইওয়ান দখলে নামা চীনের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই কঠিন।’

চীন বরাবরই তাইওয়ানকে তার নিজস্ব ভূখণ্ড মনে করে, এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হলেও তাইওয়ানকে নিজেদের সীমানাভূক্ত করতে বদ্ধপরিকর দেশটির সরকার।

অন্যদিকে তাইওয়ান নিজেকে দাবি করে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে এবং নিজেদের স্বাধীনতা-গণতন্ত্র রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন এই ভূখণ্ডের জনগণ বরাবরই চীনের বিরুদ্ধে দখলদারিত্ব ও অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগ করে আসছে।

চলতি বছর ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বেইজিং ও তাইপের মধ্যে। তাইওয়ানের সরকারের অভিযোগ- সম্প্রতি তাইওয়ানের আকাশসীমায় কয়েকবার চীনের বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করেছে।

চীন-তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকার মধ্যেই গত ৯ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, মূলভূমির সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এই পুনরেকত্রীকরণ শান্তিপূর্ণভাবেই অর্জিত হওয়া উচিত, কিন্তু একই সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরোধিতার ক্ষেত্রে চীনের গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ