রোববার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ওআিইসি সম্মেলনে ভাষণ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত আফগানিস্তান। তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এই সংকট আরও বহুগুণে বেড়েছে। দেশটির লাখ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিয়ে দিন পার করছেন। এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচাতে মানবিক সহায়তা ফান্ড গঠন করে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মুসলিম দেশগুলো।

রোববার (১৯ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-র সদস্যভুক্ত ৫৭টি দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ও ডয়চে ভেলে।

এমনিতেই দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত আফগানিস্তান। গত আগস্টে তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর থেকে সেই পরিস্থিতি দিনে দিনে কেবল খারাপই হয়েছে। আফগানিস্তানে বর্তমানে যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে এই প্রবল শীতে লাখ লাখ মানুষ অভুক্ত থাকবেন। সেই মানবিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলো ওআইসির সদস্য দেশগুলো।

২০ বছর পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।

জাতিসংঘ সম্প্রতি তালেবানের পক্ষ থেকে ওই সংস্থাটিতে একজন প্রতিনিধি নিয়োগের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে আফগানিস্তানের বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ে তালেবান সরকারকে সহযোগিতা করছে পাকিস্তান।

মূলত পাকিস্তানের উদ্যোগেই রোববার ইসলামাবাদে আফগানিস্তান নিয়ে এই প্রথমবার এতো বড় আকারে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে রাশিয়া ও ভারতের উদ্যোগে আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সেটি ছিল রোববারের তুলনায় আকারে বেশ ছোট।

পকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি জানিয়েছেন, আফগনিস্তানের জন্য ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (আইডিবি) একটি ফান্ড খোলা হবে। তবে তার এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে নিশ্চিত নয়। কারণ আফগানিস্তানের আর্থিক সংকট বেশ প্রকট আকার ধারণ করেছে।

জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বৈশ্বিক অনেক সংস্থাই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানকে অর্থসাহায্য করার ক্ষেত্রে বিশেষ উৎসাহ দেখাচ্ছে না। কারণ, অর্থসাহায্য করলে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলে মনে করছে তারা। ফলে তালেবানকে স্বীকৃতি না দেওয়া দেশগুলো শেষ পর্যন্ত কতটা সাহায্যের হাত বাড়াবে, তা স্পষ্ট হয়নি।

রোববারের ওআইসি সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘এখনই ব্যবস্থা না নিলে আফগানিস্তানে লাখ লাখ মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে পড়বেন। আফগানিস্তান বিশৃঙ্খলার দিকে চলে যাবে।’

তিনি আরও জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র যেন, তলেবান সরকার ও আফগানিস্তানের জনগণকে এক করে না দেখে। পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকারের যে ধারণা নিয়ে চলে, তা এখানকার বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মিলবে না। প্রতিটি সমাজে মানবাধিকারের ধারণা আলাদা।’

এর আগে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে গত নভেম্বরের শেষের দিকে জানিয়েছিল জাতিসংঘ। আর তাই মানবিক ও আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে আফগান ব্যাংকগুলোকে রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতেও সেসময় আহ্বান জানিয়েছিল সংস্থাটি।

উল্লেখ্য, তালেবান আফগানিস্তানে সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও সেই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

টিএম