ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হরিদ্বারে একটি ‘ধর্মীয় সম্মেলনে’ ক্ষোভ আর ঘৃণা উগরে দেওয়া হয়েছে। সেখানে মূলত দেশটির নির্দিষ্ট একটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর ডাক দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সেই ধর্মীয় সম্মেলনের সহিংস ভাষণের বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়।

এরপরই চারদিকে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে হরিদ্বারে আয়োজিত ধর্মীয় সম্মেলনে উগ্র ও সহিংস ভাষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে ভারতের রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলটির মুখপাত্র সাকেত গোখলে উত্তরাখণ্ডের জোয়ালাপুর থানায় ওই সভার উদ্যোক্তা ও বক্তাদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেন।

এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হরিদ্বার শহরে ধর্ম সংসদ নামে একটি ধর্মীয় সম্মেলনের আয়োজন করে কট্টরপন্থি হিন্দু যুব বাহিনীর (ভিএইচপি) এক নেতা। ওই ‘ধর্মীয় সম্মেলনে’ হিন্দু রক্ষা সেনার সভাপতি স্বামী প্রেমানন্দ গিরি, স্বামী আনন্দস্বরূপ, সাধ্বী অন্নপূর্ণা প্রধান বক্তা হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়া সম্মেলনের শেষ দিনে বিজেপির নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়ও সেখানে উপস্থিত হন।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া বলছে, সম্মেলনের আয়োজক ওই ভিএইচপি নেতা একজন সন্ন্যাসী। ২০১৩ সালে দেশটির মুজাফফরনগর দাঙ্গায় তিনি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এই দাঙ্গাই পরে ২০১৪ সালে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপির জয়ে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে।

বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে এই সম্মেলনের সহিংস ভাষণের অনেক ভিডিও ভাইরাল হয়। আবার সম্মেলনের অনেক ভাষণ সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়। ভাইরাল হওয়া সাধু সন্ন্যাসীদের সেই উসকানিমূলক ভাষণে বলা হয়, ভারতে একটি নির্দষ্ট সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০২৯ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্দিষ্ট ওই সম্প্রদায়ের মানুষ হবেন।

পাশাপাশি হিন্দুদের সতর্ক করে তাদের বলতে শোনা যায়, আগেভাগেই এর প্রস্তুতি নিতে হবে। মোবাইল কেনার আগে হিন্দুদের আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে হবে। এমনকি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে সংখ্যালঘু ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যারও ডাক দেন বক্তারা।

এদিকে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ভারতজুড়ে তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও এর সমালোচনা করেন। কংগ্রেস নেতা শামা মোহাম্মদ টুইট করেন, ‘মজা করার অভিযোগে মুনাওয়ার ফারুকিকে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল অথচ তিনি সেই বিতর্কিত মন্তব্য করেননি। অথচ ধর্ম সংসদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেখানে প্রকাশ্যে বক্তারা হত্যার হুমকি দিয়েছেন।’

অন্যদিকে তৃণমূলের নেতা সাকেত গোখলে টুইটারে জানিয়েছেন, তিনি জোয়ালাপুর থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভাষায়, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আয়োজক আর বক্তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের না হলে, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে মামলা দায়ের করা হবে।’

অবশ্য বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায় ধর্মীয় সম্মেলনে বক্তাদের সহিংস ভাষণের দায় অস্বীকার করেছেন। সম্মেলনে অংশ নেওয়া ভারতের ক্ষমতাসীন দলের এই নেতার ভাষায়, ‘আমি সেখানে মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য ছিলাম, আর জানি না ওখানে কী বলা হয়েছে।’

ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ, ২৯৫-এ ধারায় এই ধরনের বক্তব্য দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবশ্য টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় উত্তরাখণ্ডের পুলিশ জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্দিষ্ট ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগে দায়ীদের বিরুদ্ধে হরিদ্বার কোতোয়ালী থানায় ১৫৩-এ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।

টিএম