সামরিক অভ্যুত্থান মেনে না নিতে জনগণের প্রতি মিয়ানমারের রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সুচি আহ্বান জানালেও দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অভ্যুত্থানের পক্ষে উল্লাস করেছে জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী। সোমবার দলটির এক বিবৃতিতে অভ্যুত্থান না মেনে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে জনগণের প্রতি সু চি আহ্বান জানালেও উল্লাস করেন অনেকে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনীর বিপজ্জনক এই পদক্ষেপ দেশকে আবারও স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিবৃতিতে এনএলডি নেত্রী অং সান সু চির বরাত দিয়ে বলা হয়, আমি জনগণকে সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ মেনে না নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং আন্তরিকভাবে এই সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি। 

এদিকে, মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে সেনা অভ্যুত্থানের সমর্থনে উল্লাস করেছে দেশটির স্ব-ঘোষিত কিছু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর সদস্য। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর এই গোষ্ঠীর সদস্যরা সুয়েডাগন প্যাগোডার বাইরে শহীদদের সমাধিস্থলের কাছে গান গেয়ে উল্লাস করেছেন।

উল্লাসকারীদের একজন বিবিসি নিউজ মিয়ানমারকে বলেছেন, উদযাপনের অংশ হিসেবে তারা শহরের অন্য স্থানগুলোতেও যাবেন। গত তিনদিন ধরে জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে। এর পাল্টা কোনও বিক্ষোভ কিংবা অভ্যুত্থানবিরোধী সমাবেশ এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি।

সু চির পক্ষে জাপানে বিক্ষোভ
জাপানের রাজধানী টোকিওর ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির সামনে অং সান সু চির পক্ষে বিক্ষোভ করেছেন মিয়ানমারের একদল মানবাধিকারকর্মী। দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর অং সান সু চিসহ জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের সামরিক বাহিনী আটক করার পর এই বিক্ষোভ হয়েছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি।

কেন এই অভ্যুত্থান?

গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের প্রধান অং সান সু চি এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান টানাপোড়েনের কারণে দেশটিতে অভ্যুত্থান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নভেম্বরের ওই নির্বাচনে অং সান সু চির দল এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। সোমবার নব-নির্বাচিত সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল।

কী হয়েছিল দেশটির সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে? এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও নির্বাচনের সার্বিক ফলাফল এবং সু চির বিরোধী নেতাদের বক্তব্যই বা কি ছিল?

গত বছরের ৮ নভেম্বর মিয়ানমারে দ্বিতীয়বারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের মতো দ্বিতীয় নির্বাচনেরও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)।

মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি পার্লামেন্টের ৫০০ আসনের মধ্যে জয়লাভ করে ৩৯৯টি আসনে। আর ২০১৫ সালে প্রথমবারের নির্বাচনে এনএলডি পেয়েছিল ৩৯০টি আসন। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩২২টি আসন। তবে এই নির্বাচনে রোহিঙ্গাসহ অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভোটাধিকার ছিল না।

গত নির্বাচনে অং সান সু চির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)। এই দলটিকে দেশটির সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়।

নির্বাচনে এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও এই ফলাফলকে স্বীকৃতি না দেওয়ার ঘোষণা দেয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সমর্থিত বিরোধী দলটি। ভোট সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি, তাই নতুন করে আবারও ভোটের আয়োজন করার জন্য সেসময় নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানায় তারা।

এসএস