দেশের বেসামরিক নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে না দিয়ে সামরিক অভ্যুত্থান বজায় রাখলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। স্থানীয় সময় রোববার (৩১ জানুয়ারি) রাতে একথা জানান হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি। যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, সু চিসহ অন্যদের ছেড়ে না দিলে মিয়ানমারের দায়ী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

সোমবার ভোরে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান নেতা ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ অনেককে গ্রেপ্তার করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এমনকি বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদেরও বা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপরই ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেলকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জারি করা হয় এক বছরের জরুরি অবস্থা।

অভ্যুত্থানের পর রাজধানী নেপিদোর রাস্তায় মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের অবস্থান

জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে এই ঘটনা ঘটল। আবার মিয়ানমারের এই ঘটন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি ও লক্ষ্যকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

রোববার দেওয়া বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও অং সান সু চি-সহ বেসামরিক নেতৃত্বকে বন্দী করার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ‘আতঙ্কিত’।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি

বিবৃতিতে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার যেকোনো ধরনের চেষ্টার বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টারও বিরোধিতা করছে ওয়াশিংটন। এই পদক্ষেপগুলোর ব্যত্যয় ঘটলে মিয়ানমারের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ ক্ষমতাসীন এনএলডি’র শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হয় দেশটির সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা। এসময় জরুরি অবস্থা জারি ও সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইংয়ের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা জানায় তারা।

এদিকে রাজধানী নেপিদোতে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ। এর ফলে মিয়ানমারের রাজধানী গোটা বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির দল এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। আজ সোমবার নব-নির্বাচিত সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী সেই অধিবেশন স্থগিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।

বিবিসি জানিয়েছে, রাজধানী নেপিদো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সেনাবাহিনী সদস্যরা টহল দিচ্ছে। এছাড়া রাজধানী নেপিদোতে টেলিফোন ও ইন্টারনেট লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

এর আগে নির্বাচনে জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ নিয়ে সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের আশঙ্কার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার দেশটির সংবিধান বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান। ক্ষমতাসীন এনএলডি ও নির্বাচন কমিশন ভোট জালিয়াতির ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রয়োজনে সংবিধান বাতিল হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইং।

সূত্র: পলিটিকো

টিএম