মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী সোমবার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর থেকে অধিকাংশ স্থানে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

দেশটির সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর ইয়াঙ্গুন থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং শহরটির আশেপাশের এলাকাগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।

শহরের বিভিন্ন স্থানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। অভ্যুত্থানের খবরে আতঙ্কিত হয়ে মিয়ানমারের মানুষ টাকা তোলার জন্য এটিএম বুথের সামনে জড়ো হচ্ছেন। অনেক বুথের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।

অভ্যুত্থানের পর এটিএম বুথগুলোতে আতঙ্কিত মানুষের ভিড়।

তবে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মানুষজন এটিএম বুথ থেকে টাকাও তুলতে পারছে না বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা এরই মধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। অনেকেই বাইরে বের হয়ে খাবার ও শুকনো খাবার কিনতে শুরু করেছেন।

তবে সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন যে দোকানে চাল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেকে।

ইয়াঙ্গুনে বিবিসির সংবাদদাতা নিয়েন চান আয়ে জানান, শহরটির আঞ্চলিক পার্লামেন্ট এবং আঞ্চলিক সরকারি অফিসগুলোর দখল নিয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। বেসামরিক কর্মকর্তাদের এসব দপ্তরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

পার্লামেন্ট ভবন অবরোধ করে সতর্ক অবস্থানে সেনাবাহিনী।

দেশটির সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্টেট কাউন্সির অং সান সু চি এবং প্রেসিডেন্টের দেশটির কয়েকজন প্রথম সারির মন্ত্রী, রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা আর্মি কমান্ডার-ইন-চিফ তথা মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্ল্যাইংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে।

গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চি’র রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে।

সামরিক বাহিনীর সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আনন্দ করছেন। 

সেনাবাহিনী বলছে, নির্বাচনে জালিয়াতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এক বছর যাবত তারা ক্ষমতায় থাকবে। উল্লেখ্য, অভ্যুত্থানের পর এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে মিয়ানমারে। 

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এলএনডি জানিয়েছে যে তাদের নেতা অং সান সু চি জনগণকে এই সামরিক অভ্যুত্থান মেনে না নেওয়ার এবং প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে এখন পর্যন্ত ইয়াঙ্গুনে— যা এক সময় পরিচিত ছিল রেঙ্গুন নামে— সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছেন বিবিসির ইয়াঙ্গুন সংবাদদাতা নিয়েন চান আয়ে।

সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ দেখা যায়নি।

তবে একদল স্বঘোষিত ‘জাতীয়তাবাদী অ্যাক্টিভিস্ট’কে শহরে উল্লাস করতে দেখা গেছে তিনি জানান। তাদেরই একজন বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, তারা শহরজুড়ে আনন্দ মিছিল করবেন।

গত কয়েকদিন ধরে কয়েকটি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠিকে ইয়াঙ্গুনে সেনাবাহিনীর সমর্থনে কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। মিয়ানমারে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে এবং এখনও অভ্যুত্থানের বিপক্ষে কোন প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ দেখা যায়নি।

রাজধানী নেপিডোতে সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিফোন নেটওয়ার্কের শুধুমাত্র টেলিফোন সেবা ফিরে এসেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এএস