সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইরাকে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতাদর্শ এবং আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি গাড়ি রফতানির অভিযোগ করেছেন লেবানন-ভিত্তিক শিয়া মুসলিমদের সশস্ত্র সংগঠন হেজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহ। সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সমালোচনা করে এই অভিযোগ করেন।

সৌদি বাদশাহকে উদ্দেশ্য করে হাসান নাসরাল্লাহ বলেন, সন্ত্রাসী তিনি; যিনি বিশ্বে দায়েশের মতাদর্শ রফতানি করেন। সৌদি আরবে ইসলামিক স্টেটকে দায়েশ নামে ডাকা হয়।

হেজবুল্লাহর এই মহাসচিব বলেন, ‘সন্ত্রাসী হলেন সেই ব্যক্তি যিনি হাজার হাজার সৌদি নাগরিককে ইরাক এবং সিরিয়ায় আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য পাঠিয়েছেন এবং আপনি সেই সন্ত্রাসী।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা এবং ইয়েমেনে বছরের পর বছর ধরে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য সৌদি আরবের নিন্দা জানিয়েছেন হাসান নাসরাল্লাহ। লেবাননের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সমালোচক—যারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়া লেবানন এবং সৌদি আরবের সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য ইরান-সমর্থিত হেজবুল্লাহর সমালোচনা করেছেন, তাদের সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় নাসরাল্লাহ এসব মন্তব্য করেন।

হেজবুল্লাহর এই নেতা বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবে হামলা চালাইনি। কিন্তু সৌদি আরব এই অঞ্চলকে ধ্বংসের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’

নাসরাল্লাহর ভাষণের পর লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির কার্যালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাসরাল্লাহর মন্তব্য লেবাননের সরকার এবং জনসংখ্যার একটি বিস্তৃত অংশকে প্রতিফলিত করে না। সরকার আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং দেশের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সব রাজনৈতিক শক্তির সহযোগিতা প্রয়োজন বলে বিবৃতিতে জানিয়েছেন তিনি।

সরকারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা হেজবুল্লাহকে লেবাননের বৈচিত্র্যময় সমাজ-সংস্কৃতির অংশ হওয়ার আহ্বান জানালেও দলটির নেতৃত্ব এর বিরোধিতা করে এমন অবস্থান নেন, যা প্রথমত—লেবানিজদের ক্ষতি করে এবং দ্বিতীয়ত—তার ভাইদের সাথে লেবাননের সম্পর্কের ক্ষতি করে।

সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কুয়েতের সাথে কূটনৈতিক বিবাদ সমাধানের লড়াই করছে লেবানন। ইয়েমেন এবং আঞ্চলিক অন্যান্য সংঘাতে হেজবুল্লাহর ভূমিকার সমালোচক এই চার দেশ।

গত বছরের অক্টোবরে লেবাননের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী জর্জ কোরদাহির একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন-জোটের যুদ্ধের তীব্র সামলোচনা করতে দেখা যায় জর্জকে। এই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর লেবানন থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার এবং সৌদি আরবে লেবাননের সব ধরনের পণ্যের রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রিয়াদ।

গত সপ্তাহে এক বক্তৃতায় সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ‘লেবাননে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হেজবুল্লাহর আধিপত্য’ বিস্তার ঠেকাতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের প্রতিষ্ঠিত খ্রিস্টানদের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল ফ্রি প্যাট্রিয়টিক মুভমেন্ট হেজবুল্লাহর অন্যতম মিত্র। কিন্তু সম্প্রতি এই দলটিও হেজবুল্লাহর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছে।

সূত্র: আলজাজিরা, এএফপি।

এসএস