মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ও দেশটির নেত্রী অং সান সু চিসহ বেসামরিক সরকারের প্রতিনিধিদের বন্দির ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকারের এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এফপিকে মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী নাইজেল অ্যাডামস যুক্তরাজ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিও জোওর মিনকে তলব করে সেখানে সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের যথাযথ ‍নিরাপত্তা বিধান করতে হবে বলেও দাবি জানিয়েছেন তিনি।’

সোমবার ভোরে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান নেতা ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ অনেককে গ্রেফতার করে দেশটির সামরিক বাহিনী। মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদেরও বাসা থেকে তুলে নিয়ে বন্দি করেছে সেনাবাহিনী। রক্তপাতহীন এই অভুত্থানের পর দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেলকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, জারি করা হয়েছে এক বছরের জরুরি অবস্থা।

এ ঘটনায় সোমবারই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে নিন্দা জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি এই সেনা অভ্যুত্থান এবং সু চিসহ বেসামরিক সরকারের প্রতিনিধিদের গ্রেফতারের ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। জনগণের ভোটাধিকারকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে এবং যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে।’

২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আন্তর্জাতিক বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা প্রতিষ্ঠিত বর্ষীয়ান আন্তর্জাতিক নেতাদের সংগঠন ‘দি এল্ডারর্স’ মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক শাসন ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে দেশটিরর সেনাবাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।

সোমবারের সেনা অভ্যুত্থানকে মিয়ানমারের গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে একটি বড় আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে দি এল্ডার্সের প্রধান এবং আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলেন, ‘মিয়ানমারে যা হয়েছে, সেজন্য দেশটির সেনাবাহিনীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে তাদের ওপর ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করার সময় এসেছে আন্তর্জাতিক নেতাদের।’

বিবৃতিতে মেরি রবিনসন আরো বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যদি ক্ষমতাসীন হওয়ার লোভ পরিত্যাগ করে এবং দেশটির রাজনৈতিক নেতারা যদি বর্ণবাদ, ধর্মীয় বৈষম্য ও গোঁড়ামি থেকে নিজেদের মুক্ত করে- শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই স্থায়ীভাবে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে মিয়ানমারে।’

গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির দল এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রশ্নে অস্বস্তিতে থাকা দেশটির সেনাবাহিনী অভিযোগ তোলে নির্বাচনে জালিয়াতির। সোমবার নব-নির্বাচিত সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল।

এর আগে নির্বাচনে জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ নিয়ে সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের আশঙ্কার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার দেশটির সংবিধান বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান। অবশেষে সোমবার রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবারো রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করল দেশটির সেনাবাহিনী।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ