ছবি: ফক্স নিউজ

জার্মানির ১৬ টি রাজ্যের মধ্যে যে রাজ্যটিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ করোনা টিকার ডোজ নিয়েছেন, সেই ব্রেমেনেই সংক্রমণ বাড়ছে দেশটির অন্যান্য এলাকার তুলনায় সবচেয়ে বেশি হারে।

দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাত দিয়ে শনিবার এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জার্মানির উপকূলীয় রাজ্য ব্রেমেনে বর্তমানে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ৮০০ জনই করোনায় আক্রান্ত। অন্যান্য রাজ্যে এখনও মোট জনসংখ্যার অনুপাতে এতসংখ্যক আক্রান্ত দেখা যায়নি।

ব্রেমেনের লাইবিনিজ ইনস্টিটিউট ফর প্রিভেনশন রিসার্চ অ্যান্ড এপিডেমিওলজির গবেষক ও মহামারিবিদ হাজো জিব রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে এখানে আক্রান্তের হার খানিকটা বেশি; তবে আমার ধারণা, অল্প সময়ের মধ্যেই জার্মানির বাকি ১৫ রাজ্যের অবস্থাও ব্রেমেনের মতো হবে।’

ব্রেমেনের ভৌগলিক অবস্থানকে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে মনে করেন হাজো জিব। রয়টার্সকে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ব্রেমেনের সঙ্গে নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কের সীমান্ত রয়েছে। ওই দুটি দেশেই এখন প্রাধান্যবিস্তারকারী ধরন হয়ে উঠেছে ওমিক্রন। যেহেতু এটি খুবই সংক্রামক একটি ভাইরাস, তাই ব্রেমেনে সংক্রমণ বাড়ার প্রধান কারণ তার সীমান্তবর্তী ভৌগলিক অবস্থান।’

‘আপনি যদি আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করেন, তাহলেও এর সত্যতা পাবেন। যেখানে জার্মানির অন্যান্য রাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর হার ৪৪ শতাংশ বা তার কিছু কম-বেশি, সেখানে ব্রেমেনের করোনা রোগীদের ৮৫ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত।’

ব্রেমেন প্রাদেশিক সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ৭ লাখ মানুষ অধ্যুষিত ব্রেমেনের ৮৪ শতাংশ করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৪৪ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে জার্মানিতে সার্বিকভাবে টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন ৭২ শতাশ মানুষ এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৪২ শতাংশ।

ব্রেমেনে যারা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই ২০২১ সালে প্রথম ৬ মাস পার হওয়ার আগেই নিয়েছেন টিকার দ্বিতীয় ডোজ; এবং এই ব্যাপারটিকে সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন হাজো জিব।

এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা সবাই জানি, টিকার ডোজ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়। যেহেতু অধিকাংশ মানুষ গত বছরে প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেকের দেহে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি কমে গেছে।’

এদিকে, ব্রেমেনে দৈনিক সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যের অধিকাংশ হাসপাতালে রোগীর উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, ব্রেমেনে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে করোনায় গুরুতর হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৩ দশমিক ৬ জন। যা জার্মানির জাতীয় পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর চেয়ে অন্তত ৪ গুণ বেশি।

রাজ্যের জোসেফ স্টিফট হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. ফেলিক্স ডিয়েকমান রয়টার্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘ব্রেমেনের পরিস্থিতি দিন দিন দুঃসপ্নের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।’

করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরনের স্বীকৃতি পাওয়া ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো জার্মানিতেও হু হু করে বাড়ছে দৈনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শুক্রবার জার্মানিতে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৩৯৩ জন এবং এ রোগে দেশটিতে এই দিন মারা গেছেন ২৮৪ জন।

এছাড়া, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৯৬ জন এবং এই রোগে মৃত্যু হয়েছে মোট ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৯১ জনের।

এসএমডব্লিউ