ছবি: রয়টার্স

মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে করোনার দৈনিক সংক্রমণের পুরনো রেকর্ড পেছনে ফেলে নতুন বিশ্বরেকর্ড করল যুক্তরাষ্ট্র। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (১০ জানুয়ারি) ফের এই দুঃখজনক মাইলফলক পেরোলো দেশটি।

রয়টার্সের টালি অনুযায়ী, সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১৩ লাখ ৫০ হাজার জন। মহমারির গত দুই বছরে বিশ্বের কোনো দেশে একদিনে এত বেশি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

এর আগের বিশ্বরেকর্ডটিও অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রেরই ছিল। ৭ দিন আগে, গত ৩ জানুয়ারি দেশটিতে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছিলেন ১০ লাখের কিছু বেশি মানুষ। ১০ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত এটিই ছিল গত দুই বছরের মহামারিকালে এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড।

তারও আগে, ২০২১ সালের ৭ মে দেশটিতে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছিলেন ৪ লাখ ১৪ হাজার মানুষ। ৩ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত এটি ছিল করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড।

আগের রেকর্ডের জন্য দায়ী ছিল করোনার অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টা, আর এবার সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ ঘটল ওমিক্রনের কারণে, যেটি মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সংক্রামক। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান করোনা পরিস্থিতির নাম দিয়েছে ‘ওমিক্রন সুনামি’।

রয়টার্সের টালি বিশ্লেষণ করে আরও জানা গেছে, দৈনিক সংক্রমণে ভয়াবহ উল্লম্ফন ঘটার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে করোনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের সংখ্যাও। সোমবার সেখানে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪ জনে।

এটিও একটি রেকর্ড। কারণ, গত বছর জানুয়ারির পর করোনার কারণে এতসংখ্যক রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন- এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে হাসপাতালে ভর্তি থাকা করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৫১ জন।  

গত তিন সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির হার তিনগুণ বেড়েছে বলে জানাচ্ছে রয়টার্সের টালি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরকারের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, যদিও ওমক্রিনে আক্রান্ত হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার হার কম, কিন্তু তারপরও প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে মরণাপন্ন রোগীর চাপ।

ক্রমশ রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকা ও স্বাস্থ্যকর্মী সংকটের করণে কারণে ইতোমধ্যে দেশটির বেশকিছু হাসপাতাল সেবা দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে- উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, যদি এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তাহলে খুব দ্রুতই দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে।

দৈনিক সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশটিতে বাড়ছে করোনায় মৃত্যুহারও। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে মারা যাচ্ছেন ১ হাজার ৭০০ করোনা রোগী। ডিসেম্বরের দিকে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪০০।

২০২০ সালে মাহামারির শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত-মৃত্যুর হিসেবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬ কোটি ২৬ লাখ ৬১ হাজার ২৭২ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে মোট ৮ লাখ ৬১ হাজার ৩৩৬ জনের।

এদিকে, দেশে চলমান ‘ওমিক্রন সুনামির’ কারণে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, প্রতিদিন বাতিল হচ্ছে শত শত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট এবং প্রায় শ্বাসরোধ হওয়া রোগীর মত ধুঁকছে দেশটির খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সরবরাহ ব্যবস্থা।

এসএমডব্লিউ