করোনাভাইরাসের অতি-সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে জনসন অ্যান্ড জনসনের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ ৮৫ শতাংশ কার্যকর। জনসনের বুস্টার ডোজ নেওয়ার পর এক থেকে দুই মাস পর্যন্ত এই সুরক্ষা পাওয়া যায় বলে দক্ষিণ আফ্রিকার এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (এসএএমআরসি) প্রধান গ্লেন্ডা গ্রে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন। দেশটিতে করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউয়ের উল্লম্ফন চলছে; আর এবারের প্রাদুর্ভাবের পেছনে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা।

জনসন অ্যান্ড জনসনের করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজের কার্যকারিতার ব্যাপারে গ্লেন্ডা বলেন, আমরা এই ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজের ৮৫ শতাংশ কার্যকারিতা পেয়েছি। এই ধরনের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দুই মাস পর্যন্ত টিকে থাকে বলে আমরা দেখেছি। ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের উচ্চমাত্রার কার্যকারিতার প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পেয়ে আমরা খুশি।

এই গবেষণার অংশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ লাখ ৭৭ হাজার ২৩৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার জনকে জনসনের বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।

গবেষণায় দেশটিতে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের সময় যে স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমিত হয়েছিলেন, তাদের হাসপাতালে ভর্তি এবং গুরুতর অসুস্থতা তৈরি হয় কি-না সেদিকে নজর রাখা হয়। এতে দেখা যায়, বুস্টার ডোজ নেওয়ার প্রথম দুই সপ্তাহ পর রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ৬৩ শতাংশ হ্রাস করে এই টিকা। আর এই কার্যকারিতা পরবর্তী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া যায়।

গ্রে বলেছেন, জনসন অ্যান্ড জনসন ব্যবহার করে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার এই গবেষণা বিশ্বে প্রথম।

টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ফাইজারকে এখনও পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভ্যাকসিনের প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে, জনসনের মাত্র ৭০ লাখ ডোজ প্রয়োগ করেছে দেশটি।

পরিবহন এবং প্রয়োগের সুবিধার কারণে জনসনের ভ্যাকসিন অনেকের পছন্দের। এছাড়া এই ভ্যাকসিনের মাত্র একটি ডোজ প্রয়োগ করতে হয়; যা প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাতেও সহজেই পরিবহন এবং প্রয়োগ করা যায়।

প্রথম সংক্রমণের ক্ষেত্রে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকে ফাঁকি দিতে পারে বলে ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশে শক্তিশালী প্রমাণ মিলেছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ওমিক্রনের ঢেউয়ের সময় প্রায় ৩০ হাজার জনকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। আগের ডেল্টা এবং বেটা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ তরঙ্গের সময় যা ছিল মাত্র ১১ হাজার।

গবষণায় আরও দেখা যায়, যারা এইচআইভিতে আক্রান্ত তাদের ওমিক্রনে সংক্রমিত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত।

এর আগে, শুক্রবার দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস অব সাউথ আফ্রিকার (এনআইসিডি) পৃথক এক গবেষণায় বলা হয়, আগের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রনে গুরুতর অসুস্থতা তৈরির ঝুঁকি সম্ভবত কম; এমনকি যারা টিকা নেননি তাদের ক্ষেত্রেও।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস