জাপানের জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের হিমাওয়ারি ক্যামেরায় সাগরের বুকে বিশাল কুণ্ডুলিকে ওপরের দিকে ছিটকে পড়তে দেখা যায়

সমুদ্রের তলদেশে আগ্নেয়গিরির এক অগ্ন্যুৎপাতের পর জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় আতঙ্কিত টোঙ্গানরা উপকূলীয় এলাকা ছেড়ে উঁচু ভূমির দিকে ছুটেছেন। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই দ্বীপরাষ্ট্রের সাগরে অনেক দিন পর শুক্র ও শনিবারের দু’বারের অগ্ন্যুৎপাতের প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে হাজার মাইল দূরের প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ড থেকেও। 

সাগরের নিচের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সুনামি আঘাত হেনেছে টোঙ্গায়। সুনামি সৃষ্টির সেই মুহূর্ত কৃত্রিম উপগ্রহের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরো এক টুইট বার্তায় বলেছে, ১ দশমিক ২ মিটার উচ্চতার সুনামির ঢেউ টোঙ্গার রাজধানী নুকু’আলোফায় আঘাত হেনেছে। শুক্রবার আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর সর্বোচ্চ সুনামির ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছিল ৩০ সেন্টিমিটার।

জাপানের জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের হিমাওয়ারি ক্যামেরায় সাগরের বুকে হঠাৎ বিশাল এক কুণ্ডুলি প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে ওপরের দিকে ছিটকে পড়তে দেখা যায়। অগ্ন্যুৎপাতের পর টোঙ্গার বৃহত্তম দ্বীপ টোঙ্গাতাপুতে সুনামি আঘাত হানে। টোঙ্গার ফোনুয়াফো দ্বীপের প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হা’আপাই আগ্নেয়গিরির অবস্থান।

প্রায় আট মিনিট ধরে স্থায়ী ছিল হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হা’আপাই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত। টোঙ্গার কর্মকর্তারা বলেছেন, এই অগ্ন্যুৎপাতের শব্দ এত প্রকট ছিল যে উৎপত্তিস্থল থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরের ফিজি থেকেও ভয়াবহ বজ্রপাতের মতো শোনা গেছে। এছাড়া কয়েক হাজার মাইল দূরের নিউজিল্যান্ডেও এই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বলে নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।

আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে নির্গত ছাই, গ্যাস ও ধোঁয়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচুতে পৌঁছায়। উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, রাজধানীতে গত দুই দিন ধরে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে আগ্নেয়গিরির ছাই। টোঙ্গার আবহাওয়া বিভাগ জরুরি সতর্কতা জারি করে বলেছে, দেশে ভারী বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং তীব্র বাতাস বয়ে যেতে পারে। টোঙ্গা ছাড়াও প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল ও ফিজিতেও সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

শুক্রবারের সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহারের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যই হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হা’আপাই আগ্নেয়গিরিতে দ্বিতীয়বারের মতো অগ্নুৎপাত শুরু হয়। টোঙ্গার মেরে তৌফা নামের এক নারী বলেন, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন। রাতের খাবারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

স্টাফ নিউজকে তৌফা বলেন, ‘এটি ছিল শক্তিশালী। মাটি কাঁপছিল, আমাদের ঘর কাঁপছিল। আমার ছোট ভাই মনে করেছিল পাশে কোথাও হয়তো বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে।’ তিনি বলেন, কয়েক মিনিট পরই তাদের বাড়ি জলমগ্ন হয়ে যায়। তিনি পাশের একটি বাড়ির প্রাচীর ধসে পড়তে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

‘আমরা ঠিক তখনই জানতে পারি, এটা সুনামি। আমাদের বাড়িতে শুধু পানি ঢুকছে। আপনি সব জায়গায় চিৎকার শুনতে পাচ্ছেন, লোকজন নিরাপত্তার জন্য চিৎকার করছে, প্রত্যেকেই উচু স্থানের দিকে ছুটছে।’

অগ্নুৎপাতের পর টোঙ্গার রাজা ষষ্ঠ টুপাউকে নুকু’আলোফার রাজকীয় প্রাসাদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পুলিশের একটি বহর তাকে উপকূল থেকে দূরে একটি বাসভবনে নিয়ে গেছে।

সূত্র: এএফপি, স্টাফ নিউজ, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।

এসএস