ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

টানা ৪ দিন সক্রিয় থাকার পর আগ্নেয়গিরি শান্ত হলেও দুর্ভোগ কাটছে না দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গার অধিবাসীদের। আগ্নেয় পর্বতের আশপাশের দ্বীপগুলো ঢেকে গেছে পুরু ছাইয়ের স্তরে, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এছাড়া এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে সক্রিয় হওয়া শুরু করে টোঙ্গার আগ্নেয় পর্বত হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপেই। শনিবার থেকে শুরু হয় লাভা, গ্যাস ও ছাইয়ের উদ্গীরণ। আগ্নেয়গিরির সক্রিয় হয়ে ওঠা এবং এর ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্পের প্রভাবে সাগরে সুনামি দেখা দেয়, যার ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও জলোচ্ছাসে টোঙ্গার প্রায় সব দ্বীপ ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে পড়ে।

সোমবার জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে অগ্ন্যুৎপাত ও সুনামি বিধ্বস্ত টোঙ্গার কিছু স্যাটেলাইট ইমেজ প্রকাশিত হয়। সেসব ছবিতে দেখা যায়, টোঙ্গার নমুকা, কোলোমোতুয়া, টোঙ্গাটাপু, ফাফা ও কোলোফৌ দ্বীপ সম্পূর্ণ ঢেকে গেছে আগ্নেয় ছাইয়ের পুরু স্তরে। গাছ-পালা, শহর, গ্রাম- কোনো কিছুই আর আলাদা করে চেনা যাচ্ছে না ছাইয়ের স্তরের কারণে।

এছাড়া পুরো দ্বীপরাষ্ট্রের বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর চিত্রও পাওয়া গেছে স্যাটেলাইট ইমেজে।

একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গত ৩০ বছরে এত বড় ও ব্যাপক মাত্রার অগ্ন্যুৎপাত দেখেনি টোঙ্গাবাসী। মূল যোগাযোগ ক্যাবল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায়, দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া এই দুর্যোগের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্যও তেমনভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। টোঙ্গার সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

টোঙ্গার সরকার এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো তথ্য দাফতরিকভাবে প্রকাশ করেনি, তবে প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় দুই জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম অ্যাঞ্জেলা গ্লোভার, যুক্তরাজ্যের নাগরিক ছিলেন এই নারী। অ্যাঞ্জেলার পরিবারের সদস্যরাও তার ‍মৃত্যু নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, অ্যাঞ্জেলার মরদেহ পেয়েছেন তারা।

এদিকে, নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নানাইয়া মাহুতা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, রাজধানীসহ অধিকাংশ দ্বীপ ছাইয়ে ঢেকে যাওয়ার কারণে সেখানে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাঠাতে পারছেন না তারা।

দ্য গার্ডিয়ানকে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘টোঙ্গার রাজধানী নুকুয়ালোফার বিমানবন্দরসহ বেশ কিছু এলাকা ছাইয়ে ঢেকে গেছে। আমরা ত্রাণসামগ্রীবাহী উড়োজাহাজ সেখানে পাঠাতে চাইছি, কিন্তু ছাই পরিষ্কার না হলে ল্যান্ডিংয়ে সমস্যা হবে- এ কারণে পাঠাতে পারছি না।’

উড়োজাহাজ পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় নৌপথে টোঙ্গায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ জরুরী ত্রাণসামগ্রী নিয়ে টোঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়েছে উল্লেখ করে নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘টোঙ্গার উপদ্রুত বাসিন্দাদের জন্য নিউজিল্যান্ড সরকার ৫ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে।’

এসএমডব্লিউ/জেএস