মহামারির দুই বছরে বিশ্বজুড়ে সম্পদের অসাম্য ও দারিদ্র্য বৃদ্ধির জেরে এক অভিনব কাণ্ড ঘটিয়েছেন পশ্চিমা বিশ্বের শতাধিক কোটিপতি। বিদ্যমান কর আইন সংশোধন করে ধনীদের কাছ থেকে যেন আরও বেশি কর আদায় করা যায়- সেই অনুরোধ তারা জানিয়েছেন এক খোলা চিঠিতে।

প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে শুরু হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির বৃহত্তম মঞ্চ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলন। সেই ফোরামের উদ্দেশেই অনলাইনে সেই খোলা চিঠি পোস্ট করা হয়েছে বুধবার, যাতে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ইরানের ১০২ জন কোটিপতি। অ্যানিমেশন, ফিল্ম ও মিডিয়া বিষয়ক শীর্ষ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ডিজনির বর্তমান মালিক অ্যাবিগালি ডিজনিও আছেন এই দলে।

খোলা চিঠিতে এই কোটিপতিরা বলেন, ‘এই বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রত্যেক ধনী ব্যক্তির উচিত তাদের অর্জিত সম্পদের ন্যায্য হিস্যা সমাজ-রাষ্ট্রকে প্রদান করা। এ কারণেই আমরা বলছি- এখনই আমাদের করের আওতায় আনুন।’

চলতি সপ্তাহে দাভোসে শুরু হওয়া বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে রোববার (১৬ জানুয়ারি) একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির প্রথম দুই বছরে বিস্ময়কর ভাবে বেড়েছে কোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ। বিশ্বের শীর্ষ ১০ জন ধনী গত দুই বছরে উপার্জন করেছেন দেড় ট্রিলিয়ন বা দেড় লাখ কোটি ডলারের বেশি সম্পদ।

একই সময়ে বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষকে মহামারি ঠেলে দিয়েছে দারিদ্র্যের মুখে। অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত কর্মসংস্থান হারিয়ে চরম দারিদ্র্যের শিকার হয়েছেন বিশ্বের অন্তত ১৬ কোটি মানুষ।

অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক গ্যাব্রিয়েলা বুচার এ সম্পর্কে রোববার বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছিলেন, এই শীর্ষ ধনীদের মোট সম্পদের ওপর ধার্যকৃত কর যদি ঠিকমতো আদায় করা হয়, সেই করের মাত্র ১ শতাংশ দিয়ে বিশ্বের সব মানুষের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক টিকা প্রস্তুত করা কিংবা অন্তত ৮০ টি দেশের সামাজিক-জলবায়ুগত ও লিঙ্গভিত্তিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তহবিলের যোগান দেওয়া সম্ভব।

অক্সফামের প্রতিবেদন উপস্থাপনের দুই দিনের মাথায় এই প্রকাশিত খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কোটিপতিরা বলেন, ‘মিলিয়নিয়ার হিসেবে আমরা জানি যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান যে কর আইন ও কর আদায় ব্যবস্থা রয়েছে- তা ন্যায্য নয়।’

‘মহামারির দুই বছরে আমাদের সম্পদ ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ দরিদ্র হয়েছে- এই সমস্যার মূল যে বিদ্যমান কর আইনের মধ্যে নিহিত সেটিও আমরা জানি, তবে আমাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন এই সত্য প্রকাশ্যে স্বীকার করার সৎসাহস রাখে।’  

খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কোটিপতিরা নিজেদের মধ্যে একটি জোটও গঠন করেছেন; সেই জোটের নাম তারা রেখেছেন ‘প্যাট্রিয়টিক মিলিওনিয়ার্স’।

জোটের চেয়ারম্যান মরিস পার্ল এক বিবৃতিতে বুধবার বলেন, ‘আমরা জানি, যদি কোটিপতিদের কাছ থেকে করের ন্যায্য হিস্যা আদায় করা যায়, সেক্ষেত্রে সহজেই বিশ্ব থেকে দারিদ্র‌্য নিমূর্ল করা সম্ভব; আর আমরা ঠিক সেটাই চাই।’

সূত্র: এএফপি

এসএমডব্লিউ