ইউএস বেনফোল্ড, ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের জলসীমায় অবৈধভাবে ঢুকে পড়ায় একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজকে ধাওয়া করেছে চীনা প্রতিরক্ষা বাহিনীর নেতৃত্বাধীন একাধিক যুদ্ধজাহাজ। বৃহস্পতিবার চীনের সেনা বাহিনী দ্য পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিআরসি) দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড শাখা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ তথ্য।

অবশ্য পাল্টা এক বিবৃতিতে চীনের সেনাবাহিনীর এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী।

দক্ষিণ চীন সাগরে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এমন ঘটনা ঘটল। এর আগে ২০২১ সালের ২০ মে ওই সাগরে নিজেদের জলসীমায় ঢুকে পড়ায় মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএস কার্টিসকে ধাওয়া দিয়েছিল চীনা যুদ্ধজাহাজ, এবং সেবারও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী।

চীনের সেনা বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ চীন সাগরের প্যারাকেল দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি এসে পড়ে মার্কিন যুদ্ধজাহাজা ইউএস বেনফোল্ড। যে এলাকায় ওই জাহাজটি অবস্থান করছিল, তা চীনের জলসীমাভুক্ত এবং সেখানে প্রবেশ বিষয়ক কোনো অনুমতিপত্র ইউএস বেনফোল্ডের ছিল না।

এই পরিস্থিতি দ্য পিপলস লিবারেশন আর্মির একাধিক যুদ্ধজাহাজ ইউএস বেনফোল্ডকে ধাওয়া দিয়ে নিজেদের সমুদ্রসীমার বাইরে পাঠিয়ে দেয়।

বিবৃতিতে চীনা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা আন্তরিকভাবে চাই, যুক্তরাষ্ট্র যেন এই ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে। যদি তা না হয়, সেক্ষেত্রে এসবের ভবিষ্যৎ পরিণতি খুব গুরুতর হবে।’

এদিকে, মার্কিন নৌ বাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া পাল্টা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে- চীনা সেনা বাহিনীর এই দাবি বা অভিযোগ একদমই অসত্য।

মার্কিন নৌ বাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় শাখার অধীন ৭ম নৌবহরের মুখপাত্র মার্ক ল্যাংফোর্ড বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘এটি সঠিক যে, এই মুহূর্তে ইউএস বেনফোল্ড দক্ষিণ চীন সাগরে আছে এবং টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে; কিন্তু তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক নৌ চলাচল নীতি ফ্রিডম অব নেভিগেশনের আওতায় এবং ইউএস বেনফোল্ড কখনও চীনের জলসীমায় প্রবেশ করেনি।

‘পিআরসির বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ মিথ্যা,’ রয়টার্সকে বলেন ল্যাঙফোর্ড।

মার্কিন নৌবাহিনীর বিবৃতিতে এ সম্পর্কে আরও বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক আইনে প্রত্যেক জাতির নৌযান ও বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে যতখানি স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র সবসময় তা মেনে চলে। ইউএস বেনফোল্ডও তাই করেছে। তাই পিআরসির হুমকিতে আমরা ভীত নই।’

বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক জলপথ দক্ষিণ চীন সাগর । প্রতিবছর দশ শতাংশেরও বেশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হয় এই জলপথ দিয়ে।

গত প্রায় দু’বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্যিক জলপথে চীন অন্যায়ভাবে দখলদারিত্ব বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে দক্ষিণ চীন সাগরের সাগরের উপকূলবর্তী দেশ জাপান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও তাইওয়ান।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার তিক্ত কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে এই অভিযোগ। বেইজিং বরাবরই বলে আসছে, চীন কেবল দক্ষিণ চীন সাগরে নিজের সীমানাভূক্ত এলাকার নিরাপত্তা বিধান করছে এবং অন্যদেশের জলসীমা দখলের কোনো অভিপ্রায় চীনের নেই, বরং উপকূলীয় অন্যান্য দেশগুলো তাদের জলসীমা বাড়াচ্ছে অবৈধভাবে।

তবে বেইজিংয়ের এই স্বীকারোক্তি ‘গ্রহণযোগ্য’ মনে না হওয়ায় তা বাতিল করে দিয়েছে ওয়াশিংটন।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ