সীমান্তের কাছে রাশিয়ার হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন এবং অচলাবস্থা কাটাতে কূটনৈতিক আলোচনা ব্যর্থ হতে যাওয়ায় দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠছেন ইউক্রেনীয়রা। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের বাসিন্দারা বলেছেন, তারা সবচেয়ে ভালো কিছুর আশা করছেন। তবে সবেচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুত নিচ্ছেন।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প নগরী খারকিভে ট্যাংক, যুদ্ধবিমান এবং ট্রাক্টরের অনেক কারখানা রয়েছে। রাশিয়া সীমান্ত থেকে ইউক্রেনের এই শহরের দূরত্ব মাত্র ৪২ কিলোমিটার। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি সীমান্তের এই পরিস্থিতিকে রুশ হামলার সম্ভাব্য নিশানা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

তবে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পরিকল্পনা অস্বীকার করে ন্যাটো জোটে ইউক্রেনের যোগদান ঠেকানো এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য পশ্চিমাদের ওপর চাপপ্রয়োগের নীতি নিয়েছে।

খারকিভের মেয়র ইগোর তেরেখোভ বলেছেন, ১৪ লাখ মানুষের এই শহর শান্ত এবং ঐক্যবদ্ধ হবে। এই শহর কাউকে ছিনিয়ে নিতে দেবেন না তিনি। চলতি সপ্তাহে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শহরের কিছু বাসিন্দা বলেছেন, তারা নিজ শহরেই অবস্থান এবং আক্রান্ত হলে লড়াই করবেন। তবে অন্যরা পালিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় একটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ড্যানিয়েলা শাতোখিনা বলেছেন, ‘যদি কিছু ঘটে যায়, তাহলে আমাকে এক জায়গায় থাকতে হবে না। আমি দূরে থেকেও কাজ করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে চিন্তা না করার চেষ্টা করছি। আমি আশা করছি, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি সর্বোত্তম আশা করছি। আগ বাড়িয়ে আতঙ্কিত না হওয়াই ভালো। তবে কোনও ঘটনা যেভাবে ঘটবে, সেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক ভালো।’

শহরের বাসিন্দা এবং সহকারী ব্র্যান্ড ম্যানেজার আনিয়া ভার্জেলেস এবারের পরিস্থিতিকে ২০১৪ সালের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ওই সময় রাশিয়া হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপের দখল নেয়।

তিনি বলেন, এ ধরনের কোনও ঘটনা ক্রিমিয়ার সাথে ঘটতে পারে, তা কেউ ভাবেনি। কেউ সেটি কল্পনাও করতে পারেনি। আমি এবারও এমন কিছু বিশ্বাস করতে চাই না। কিন্তু আমরা জানি না, এরপর কী হবে।

এর আগে, শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক সাক্ষাৎকারের বলেন, খারকিভে রুশ হামলা আসন্ন বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। যদিও পরবর্তীতে তার একজন মুখপাত্র বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অনুমিত এক দৃশ্যকল্পের ব্যাপারে ধারণা দিয়েছেন।

শুক্রবার ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকদের ব্যাপারে আলোচনা হলেও বড় ধরনের কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি। তবে উভয়পক্ষ চলমান এই সংকট সমাধানের চেষ্টায় আলোচনা চালিয়ে যেতে একমত হয়েছে।

খারকিভের বিক্রয় ব্যবস্থাপক ওলেক্সি কোরমিলেটস বলেছেন, যাই ঘটুক না কেন তিনি খারকিভ ছেড়ে যাবেন না।

‘পালিয়ে যাবো? না। কোনও পথ নেই। আমি এখানেই জন্মগ্রহণ করেছি। এখানে বেড়ে উঠেছি। যাই ঘটুক না কেন, আমি এখানেই থাকছি। এমনকি যদি নগর প্রতিরক্ষার যোগ দিতে হয়, তাহলে আমি তাই করবো।’

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস