সাদ আল হারিরি, ছবি: রয়টার্স

পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম দেশ লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির সুন্নি মুসলিমদের অন্যতম শীর্ষ নেতা সাদ আল হারিরি রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তিনি ও তার দল ফিউচার মুভমেন্ট অংশ নেবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে লেবাননের দু্ইবারের নির্বাচিত এই প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন- বর্তমান লেবাননের সবচেয়ে বড়, প্রভাবশালী ও শিয়া মুসলিমদের রাজনৈতিক গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর দাপটের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

ভাষণে হারিরি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে, লেবাননে চলমান ইরানীয় প্রভাবের এই রাজনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই। বিশৃঙ্খলা, জাতিগত বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক মতভেদে জর্জরিত লেবানন এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’

‘আমরা দেশের জনগণকে সেবা করে যাব, তাদের পাশে থাকব; কিন্তু ক্ষমতা, রাজনীতি ও পার্লামেন্টে আমাদের অংশগ্রহণ আপাতত স্থগিত থাকবে। সামনের নির্বাচনে আমি এবং আমার দলের কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না।’

জাতীয় রাজনীতিতে সাদ আল হারিরির আগমন তার বাবা ও লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক আল হারির নিহত হওয়ার পর। ২০০৫ সালে গুপ্তঘাতকের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন রফিক আল হারিরি।

২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হন সাদ আল হারিরি, এই পদে তিনি ছিলেন ২০১১ সাল পর্যন্ত। তারপর দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

জাতিগত ভাবে সুন্নি মুসলিম হওয়ায় লেবাননের সুন্নি সম্প্রদায়ে প্রভাব বাড়তে থাকে হারিরি। একসময় তিনি সেই সম্প্রদায়ের একজন শীর্ষ নেতা হিসেবেও হাজির হন।

কিন্তু এই ব্যাপারটিই তার জাতীয় রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে সংকটে ফেলে। কারণ, লেবাননের মোট জনসংখ্যার ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ সুন্নি, ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিয়া এবং বাকি অংশ খ্রিস্টান ও ইহুদি। ফলে, সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায়ের বাইরে অন্যান্য মহলে কমতে থাকে হারিরি ও তার দল ফিউচার মুভমেন্টের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা।

পাশাপাশি, একই সময়ে দেশটিতে বাড়তে থাকে ইরান প্রভাবিত রাজনৈতিক গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর প্রভাব।

কিন্তু এমন এক সময়ে হারিরি রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন, যখন লেবাননের অর্থনীতি ধ্বংসের দোড়গোড়ায় অবস্থান করছে। বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, বর্তমান বিশ্বে যে কয়েকটি দেশে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট চলছে, সেসবের মধ্যে শীর্ষে আছে লেবানন।

এছাড়া বছরের পর বছর চলা সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও গৃহযুদ্ধের জেরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির থাকার কারণে বর্তমানে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে আছেন দেশটির বিপুল সংখ্যক মানুষ।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ