মাহাথির মোহাম্মদ, ছবি: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি থাকা মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার ক্ষুধা ফিরে এসেছে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন, এমনকি মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টাও করছেন তিনি।

পাশাপাশি, দেশবাসীকে তার স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা না করার আহ্বান জানিয়েছেন মাহাথির। মঙ্গলবার মহাথিরের জ্যেষ্ঠ সন্তান মেরিনা মাহাথির এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন এসব তথ্য।

বিবৃতিতে মেরিনা বলেন, ‘তার স্বাস্থ্যের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আজ তিনি জানিয়েছেন, তিনি ক্ষুধা বোধ করছেন। এমনকি হাসপাতালে তাকে দেখতে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ, হাসি-ঠাট্টাও করেছেন তিনি।’

‘যারা দ্রুত আরোগ্য হয়ে উঠতে বাবার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, তাকে বাবা ও আমাদের সবার পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি; আর দেশবাসীকে আমরা জানাতে চাই যে, দুশ্চিন্তার সময় শেষ হয়েছে।’

গত ৮ জানুয়ারি হৃদযন্ত্রে সমস্যা নিয়ে দেশটির ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট (আইজেএন) হাসপাতালে ভর্তি হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ১১ দিন সাধারণ কেবিনে রাখা হলেও গত ১৯ জানুয়ারি তাকে স্থানান্তর করা হয় করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)।

মঙ্গলবার আইজেএন হাসপাতাল থেকে মাহাথিরের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। যে কারণে ৯৬ বছর বয়স্ক এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মারা গেছেন—এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে মালয়েশিয়ায়।

তবে রোববার (২৩ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে মাহাথিরের মেয়ে এবং জ্যেষ্ঠ সন্তান মেরিনা মাহাথির বলেন, তার বাবা চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন।

মানুষকে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতিতে মেরিনা আরও বলেন, ‘সূত্র যাচাই-বাছাই না করে বাবার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কোনও গুজব ছড়াবেন না। মাহাথির মোহাম্মদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সময়ে সময়ে ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট এবং তার পরিবার বিবৃতি দেবে।’

গত ১৬ ডিসেম্বর মেডিকেল চেকআপের জন্য আইজেএন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মাহাথির। ৬ দিন পর, ২২ ডিসেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এর আগে ১৯৮৯ এবং ২০০৭ সালে দুইবার বাইপাস সার্জারির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন মাহাথির।

চিকিৎসা পেশা থেকে রাজনীতিতে আসা মাহাথির মোহাম্মদকে বলা হয় আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি। শুধু মালয়েশিয়ারই নয়, এশিয়ার কোনো দেশে সবচেয়ে দীর্ঘসময় গণতান্ত্রিকভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ডটিও রয়েছে তার দখলে।

১৯২৫ সালে মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশের আলোর সেতার এলাকায় জন্ম নেওয়া মাহাথির মোহাম্মদ পড়াশোনা শেষে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই পেশা ধরে রেখেছিলেন তিনি।

চিকিৎসা পেশায় থাকা অবস্থাতেই মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড মালয়েস ন্যাশনাল অর্গানইজেশনে (ইউএমনএনও) যোগ দিয়ে পার্লামেন্ট সদস্য হন ১৯৬৪ সালে। তারপর ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে শিক্ষামন্ত্রী, এবং ১৯৭৬ সালে দেশের উপ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।

১৯৮১ সালে প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন মাহাথির মোহাম্মদ। টানা ২২ বছর এই পদে আসীন থাকার পর ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর নেন তিনি।

তারপর জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে ফের ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন তিনি এবং এই পদে থাকেন ২০২০ সাল পর্যন্ত।

ওই বছরেরই আগস্ট মাসে নিজের রাজনৈতিক দল হোমল্যান্ড ফাইটার্স পার্টি গঠন করেন মাহাথির। বর্তমানে সেই পার্টির এমপি হিসেবে পার্লামেন্টে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

সূত্র: রয়টার্স, দ্য স্টার

এসএমডব্লিউ