রাজধানী নুকু’আলোফায় কয়েকজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর লকডাউনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ টোঙ্গা। সাম্প্রতিক অগ্নুৎপাত এবং সুনামির পর মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এক বন্দরে দু’জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী সিয়াওসি সোভালেনি।

বুধবার টোঙ্গার রেডিও স্টেশন ব্রোডকম এফএম বলেছে, দেশটির অপর একটি পরিবারেও তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটি এতদিন ভাইরাস-মুক্ত ছিল।

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশটিতে আসা সব ধরনের ত্রাণসামগ্রী স্পর্শহীন বিধি-নিষেধ মেনে গ্রহণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের দিকে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সোভালেনি বলেছেন, বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে লকডাউনে যাবে টোঙ্গা। আর দেশের সামগ্রিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতি প্রতি ৪৮ ঘণ্টা পর পর্যালোচনা করা হবে।

তিনি বলেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মহামারির গতি ধীর করা এবং যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সুস্থতা। এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে কোনও নৌকা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না। বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের চলাচলও আর হবে না।

টোঙ্গার সিভিল সোস্যাইটি ফোরামের চেয়ারম্যান দ্রিউ হ্যাভি বলেছেন, আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির ধারণা করছি। তবে এই পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হতে যাচ্ছে।

নুকু’আলোফা থেকে বিবিসিকে তিনি বলেন, ‌‘আমি মনে করি এখন আশার বিষয় হল আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং খুঁজে বের করব যে এই বিপদটি টোঙ্গার জন্য কত ব্যাপক।’

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির বিস্তার চললেও বিশ্বের অল্প যে কয়েকটি স্থান এতদিন করোনাভাইরাস-মুক্ত ছিল তার মধ্যে অন্যতম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রত্যন্ত এই দ্বীপ রাষ্ট্র। ২০২০ সালের শুরুর দিকেই বাইরের বিশ্বের জন্য নিজেদের সীমানা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিল টোঙ্গা।

কিন্তু গত মাসে সমুদ্রের তলদেশে অগ্নুৎপাত এবং সুনামির আঘাতে বিধ্বস্ত এই দেশটি এখন বিদেশি সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো কিছু দেশ টোঙ্গায় নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি, খাদ্যসামগ্রী, আশ্রয় এবং উদ্ধারের সরঞ্জাম সরবরাহ করছে।

বিদেশি সব ত্রাণ সামগ্রী একেবারে স্পর্শহীন কঠোর বিধি-নিষেধের মাধ্যমে গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এমনকি দেশটিতে পৌঁছানো মানবিক ত্রাণ সামগ্রী কোনও টোঙ্গানকে দেওয়ার আগে তিন দিন আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দেশটির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করা অস্ট্রেলিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ এইচএমএএইচ অ্যাডিলেইডে করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। ওই জাহাজের প্রায় ৬০০ ক্রুর মধ্যে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

তারপরও এই জাহাজটি রাজধানী নুকু’আলোফার বন্দরে নোঙ্গর করা হয়। টোঙ্গার সরকার এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে এবং বলেছে, জাহাজের সঙ্গে দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সম্পর্ক আছে তারা তা বিশ্বাস করে না।

জাহাজটি দেশে ফেরার সময় টোঙ্গার নাগরিকদের করোনার নমুনা নেবে; যাতে অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারে যে, আসলে কোন দেশ থেকে টোঙ্গায় এই ভাইরাস পৌঁছেছে।

টোঙ্গার মোট এক লাখ ৬ হাজার নাগরিকের মধ্যে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকার উভয় ডোজ নিয়েছেন কমপক্ষে ৮৩ শতাংশ। তবে এই দ্বীপ দেশটির প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চলে সীমিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার কারণে অনেক নাগরিককে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিতে ফেলেছে।

সূত্র: বিবিসি।

এসএস