ডব্লিউএইচও’র শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান

যারা ভাবছেন টিকার ডোজের ফলে সৃষ্ট হার্ড ইমিউনিটিই করোনার মতো একটি উচ্চ সংক্রামক ও প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ ঠেকিয়ে দিতে পারবে- তারা ‘বোকার স্বর্গে’ বসবাস করছেন বলে মনে করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান। এই ধারণাকে ‘নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌম্য স্বামীনাথান এ সম্পর্কে বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু থেকে টিকা সুরক্ষা দেয়- এটি সত্য। যদি করোনা টিকা না থাকতো, সেক্ষেত্রে বয়স্ক ও ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের মৃত্যুর হার অনেক বেশি হতো- তাও সঠিক।’

‘কিন্তু যারা ভাবছেন অধিক সংখ্যক মানুষ টিকার ডোজ নেওয়ার ফলে সৃষ্ট তথাকথিত হার্ড ইউমিনিটিই এই মহমারিকে নির্মূল করে দিতে পারবে- তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন এবং এই নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ ধারণার জন্য আমাদের সবাইকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।’

গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর অকল্পনীয় দ্রুত গতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে ওমিক্রন, যেটি ইতোমধ্যে সার্স-কোভ-২ বা মূল করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই ভাইরাসটির দাপটে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন।

কিন্তু অতিমাত্রায় সংক্রামক হলেও ওমিক্রন আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও মৃত্যুর হার কম থাকায় যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশ ইতোমধ্যে অধিকাংশ করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। অবশ্য এই তালিকায় থাকা দেশগুলোর অধিকাংশ জনগণই ইতোমধ্যে টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন।

মঙ্গলবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে ইউরোপের দেশগুলোর বিধিনিষেধ শিথিল বিষয়ক পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন ডব্লিউএইচওর টেকনিক্যাল বিভাগের প্রধান মারিয়া ভ্যান খারকোভ ও জাতিসংঘভিত্তিক এই সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।

ব্রিফিংয়ে গেব্রিয়েসুস বলেছিলেন, ‘যেসব দেশ টিকাদান কর্মসূচির ব্যাপ্তিকে গুরুত্ব দিয়ে যাবতীয় করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করছে- আমাদের মতে সংক্রমণের এই পর্যায়ে এটি খুবই অপরিণত একটি সিদ্ধান্ত।’

ডব্লিউএইচওর সংবাদ সম্মেলনের দুই দিনের মধ্যে এনডিটিভিকেও প্রায় একই কথা বললেন সৌম্য স্বামীনাথান।

বৃহস্পতিবারের সাক্ষাৎকারে করোনাভাইরাসেন নতুন রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন নিয়েও কথা বলেন ডব্লিউএইচওর এই শীর্ষ বিজ্ঞানী। তিনি জানান, মহামারির ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে এই ভাইরাসটি কোন ভূমিকা নেবে- তা এখনও গবেষণাসাপেক্ষ।

তিনি বলেন, ‘মাত্র দুই মাস হলো এই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। চলমান মহমারিতে দীর্ঘমেয়াদে এই ভাইরাসটি ভূমিকা কী থাকবে- সে বিষয়ক ধারণা নেওয়ার জন্য এটি খুবই অল্প সময়।’

‘বর্তমানে যদিও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ওমিক্রনে আক্রান্তের পরিমাণ বাড়লেও গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুঝুঁকি কম, কিন্তু মিউটেশনের মাধ্যমে যদি এই ভাইরাসটির কোনো উপধরনের আগমণ ঘটে, সেক্ষেত্রে এখনকার চিত্র পুরো বদলে যাবে।’

তবে ওমিক্রন ঠেকাতে বিশেষ কোনো টিকার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না সৌম্য স্বামীনাথান। সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বর্তমানে যেসব টিকা বাজারে আছে- তার প্রতিটিই বেশ ভালো সুরক্ষা দিচ্ছে। বিশেষ করে, বয়স্ক ও ঝুঁকিতে থাকা যেসব লোকজনটিকার ডোজ নিয়েছেন- তারা কার্যকর সুরক্ষা পাচ্ছেন।’

বিশ্বের ধনী দেশগুলো এখন ঢালাওভাবে নাগরিকদের টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দিচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোরও এই পথ অবলম্বন করা উচিত কি না- প্রশ্নের উত্তরে স্বামীনাথান বলেন, ‘এটা আসলে এক একটি দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। প্রতিটি দেশ যদি তার এলাকায় করোনা বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে তাহলেই এই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবে সরকারসমূহ।’

‘অন্য দেশে নাগরিকদের বুস্টার ডোজ দেওয়া, তাই আমাদেরও দেওয়া উচিত- এই ধারণা থেকে বিরত থেকে নির্ভর করতে হবে নিজ দেশের সংক্রমণ বিষয়ক তথ্যের ওপর।’

এসএমডব্লিউ