ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র।

দেশটি বলছে, ইউক্রেনে হামলা করতে অজুহাত হিসেবে ভুয়া হামলার পরিকল্পনা করছে মস্কো। শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ওয়াশিংটনের অভিযোগ, ইউক্রেনে হামলার অজুহাত হিসেবে মস্কো দাবি করতে পারে যে- ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর কিংবা খোদ রাশিয়ার ওপর হামলা চালিয়েছে। আর মূলত মিথ্যা এই অজুজাত সামনে এনেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে হামলার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া।

এর পাশাপাশি আরেকটি বিকল্প হিসেবে বিস্ফোরণের গ্রাফিক চিত্রসহ একটি ভুয়া বা সাজানো হামলা মঞ্চায়ন ও ছবি তুলে রাখার কথা রাশিয়া বর্তমানে বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে। তবে এর জবাবে রাশিয়া বলছে, এই ধরনের কোনো হামলার কোনো পরিকল্পনাই আসলে তাদের নেই।

ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।

অবশ্য ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা বরাবরই বলে আসছে যে, পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে হামলা হলে তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে। এছাড়া ইউক্রেনে হামলা হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি বরাবরই দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

এছাড়া বুধবার পূর্ব ইউরোপে প্রায় ৩ হাজার অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অবশ্য রাশিয়ার আক্রমণের হুমকিতে থাকলেও এসব সেনা ইউক্রেনে পাঠানো হবে না। মূলত পূর্ব ইউরোপের অন্য দুই দেশ পোল্যান্ড এবং রোমানিয়ায় এই ৩ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে। সামরিক জোট ন্যাটো সেনা মোতায়েনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

বিবিসি প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সাজানো এই হামলার পরিকল্পনা করছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস এলাকায় একটি হামলা ও এর ফলে বেসামরিক মানুষের হতাহতের চিত্র বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা হবে। মূলত ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জাগিয়ে তুলতেই সেটি করা হবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, আর এরপরই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলার কারণ হিসেবে সেটিকে ব্যবহার করা হবে। এই পরিকল্পনায় ভুয়া হামলা মঞ্চায়ন এবং সেটির ছবি তুলে রাখারও চিন্তা করা হয়েছে।

সেসব ছবি ও ভিডিওচিত্রে মরদেহ এবং ধ্বংস হওয়া বিভিন্ন স্থান দেখানো হবে। এছাড়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ভুয়া সামরিক সরঞ্জাম, তুরস্কের তৈরি ড্রোন এবং রুশভাষী ‘অভিনেতাদের’ শোকার্ত ছবিও তুলে ধরা হবে।

তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই ধরনের কোনো পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছেন। তার উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, ‘রাশিয়াকে উসকানি দিয়ে এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসব বিষয়ে নানা কথা বলা হলেও পরে দেখা যায়- সেরকম কিছুই আসলে হয় না।’

অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভ্লাদিমির চিজভ সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে জানিয়েছেন, ইউক্রেনে হামলা করতে অজুহাত হিসেবে ভুয়া হামলার কোনো পরিকল্পনা মস্কো করছে না।

টিএম