গত কয়েকদিন ধরে ক্রমেই রাজনৈতিক রঙ নিয়েছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের হিজাব বিতর্ক। মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পরে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে পারবে কি না, তা জানতে পিটিশন দায়ের করা হয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্টে। এরই মাঝে হিজাব বনাম গেরুয়ার ‘লড়াই’ শুরু হয়েছে রাস্তায়।

আর এই বিতর্কের মাঝেই এবার মুখ খুললেন ভারতের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) প্রধান এবং বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব। হিজাব বিতর্কে চলমান টালমাটাল পরিস্থিতিতে দেশটির কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারকে এই ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী করে লালু প্রসাদের অভিযোগ, দেশ (ভারত) গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই গৃহযুদ্ধের জন্য দায়ী হবে মোদি সরকার। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।

গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্ণাটকে হিজাব নিয়ে বিতর্ক চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেই বিতর্ক কর্ণাটকের সীমা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে রাজধানী দিল্লি-সহ দেশটির আনাচে-কানাচে। হিজাব ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এর সপ্তাহখানেক আগে হিজাব ইস্যুতে মুখ খোলেন রাহুল গান্ধীও।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের একটি বার্তাসংস্থার কাছে বুধবার নিজের মতামত প্রকাশ করেন দেশটির বর্ষীয়ান রাজনীতিক লালু প্রসাদ যাদব। তিনি বলেন, ‘বিজেপি কেবল দাঙ্গা, মন্দির নিয়ে কথা বলেছে। প্রকাশ্যে ভোটে হেরে যাওয়ার বিষয়ে দলের হতাশা প্রকাশ করছে এভাবে। দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। এর জন্য দায়ী থাকবে মোদি সরকার।’

বিহারের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘৭০ বছরেরও বেশি সময় আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা ব্রিটিশদের এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছিলেন। কিন্তু এখন ব্রিটিশরা বিজেপির রূপে ফিরে এসেছে... আমরা উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টিকে সমর্থন করি।’

এদিকে বুধবার হিজাব সংক্রান্ত পিটিশনটি শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট। অপরদিকে হিজাব বিতর্কের জেরে কর্ণাটকের সব স্কুল ও কলেজে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। এর আগেই অশান্তি রুখতে রাজ্যটিতে তিনদিনের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই। এই কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০০ মিটারের মধ্যে কোনো জমায়েত করা যাবে না বলে নির্দেশনা জারি করেছেন কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার কমল পান্ত।

গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কর্ণাটকের বিভিন্ন স্কুল কলেজে একদিকে হিজাব পরে ক্লাস করার অনুমতির দাবিতে আন্দোলন করছে মুসলিম ছাত্রীরা। অন্যদিকে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া ওড়না পরে হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে।

কর্ণাটকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ছয়জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করার পর। সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের  ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও তাদের ছাত্র সংগঠন।

উদুপির এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের মান্দিয়া এবং শিভামোগগা এলাকায়। সেখানকার কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব নিষিদ্ধ করে। যদিও আইনে হিজাব পরে মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসে আসতে কোনও বাধা নেই।

পরে উদুপির একটি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রী হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই বিষয়েই কর্ণাটকের হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার হিজাব সংক্রান্ত পিটিশনটি শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট।

টিএম