মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব নিষিদ্ধ ঘিরে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে গত সপ্তাহে বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। সোমবার কর্ণাটকের উদুপি জেলায় কিছু স্কুল ফের চালু হলেও স্কুলের মূল ফটকে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনডিটিভি বলছে, কর্ণাটকের বিভিন্ন স্কুলে হিজাব খুলে ফেলার পর মুসলিম ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাই কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ অনুযায়ী, সোমবার সকালে কর্ণাটকজুড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব খুলে ক্যাম্পাসে প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছে। গত সপ্তাহে আদালতের আদেশে বলা হয়েছিল, রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়া যেতে পারে। তবে কোনও শিক্ষার্থীই ধর্মীয় পোশাক পরিধান করতে পারবেন না।

সোমবার ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কর্ণাটকের মান্দিয়া জেলার একটি সরকারি স্কুলের প্রবেশদ্বারে ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার নির্দেশ দিচ্ছেন একজন শিক্ষক। এ সময় ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে ওই শিক্ষকের বাগ-বিতণ্ডাও হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন। উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময়ের পর ছাত্রীরা তাদের হিজাব খুলে ফেলেন এবং করোনা প্রটোকল মেনে কেবলমাত্র মাস্ক পরে স্কুল চত্বরে প্রবেশ করেন।

এ সময় দুই শিক্ষার্থীর এক বাবাকে স্কুলের একজন শিক্ষকের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্ক করতে দেখা যায়। তবে তারা কি নিয়ে আলোচনা করছেন ভিডিওতে সেটি পরিষ্কার নয়। যদিও পরবর্তীতে সন্তানদের হিজাব খুলে স্কুলে প্রবেশ করতে বলেন ওই বাবা।

উদুপি জেলার সরকারি একটি স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী এনডিটিভিকে বলেন, ক্লাসে যোগ দেওয়ার আগে সে ও তার এক বন্ধুর হিজাব খুলে রাখতে হয়েছে।

এদিকে, হিজাব খুলে ফেলতে রাজি না হওয়ায় শিবমোগার একটি স্কুলের ১৩ শিক্ষার্থীকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জন দশম শ্রেণির, দু’জন ৯ম শ্রেণির এবং একজন অষ্টম শ্রেণির। ওই স্কুলের অধ্যক্ষ সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা (শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা) প্রতিবাদ জানাননি (যখন তাদের হিজাব খুলতে বলা হয়)। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের (১৩ শিক্ষার্থী) বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা আমাদের অনুরোধ রাখেনি। যে কারণে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

হিজাব খুলতে অস্বীকৃতি জানানো শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেছেন, ‘আমাদের বাচ্চাদের পরীক্ষায় লেখার জন্য এনেছিলাম। তারা বোরকা পরেনি, কেবলমাত্র হিজাব পরেছে। এর আগেও তারা হিজাব পরেছিল। তখন কোনও সমস্যা ছিল না... আজ শিক্ষকরা তাদের থামাচ্ছেন। আমরা সন্তানদের হিজাব খুলতে দিতে পারি না। এই কারণে আমরা তাদের বাসায় ফেরত নিয়ে যাচ্ছি।’

ক্লাসের সময় হিজাব পরা নিষিদ্ধ ঘিরে কর্ণাটক প্রদেশে ব্যাপক বিতর্কের মাঝে গত সপ্তাহে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে কর্ণাটকের হাই কোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন এক আদেশে ধর্মীয় পোশাক পরে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে বারণ করেন। সোমবার রাজ্যের কিছু স্কুল খুললেও আগামী বুধবার পর্যন্ত একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজ বন্ধ থাকবে।

অন্যদিকে, আজ স্কুল খোলার আগে কর্ণাটকের উদুপি, মেঙ্গালুরু এবং শিবমোগাসহ কয়েকটি জেলায় বড় ধরনের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে কর্ণাটকের উদুপি জেলার একটি স্কুলের ছয় মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরে ক্লাসে ঢোকার অনুমতি না দেওয়া ঘিরে বিতর্কের শুরু হয়।

হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে হাই কোর্টে কর্ণাটকের এই মুসলিম ছাত্রীরা পিটিশন দায়ের করেছেন। সোমবার স্থানীয় সময় আড়াইটার দিকে আদালতে এই বিষয়ে শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এসএস