ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে হিজাব নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। গত জানুয়ারি মাসে রাজ্যটির উদুপি জেলায় হিজাব পরিহিত ৫ ছাত্রীকে কলেজে ঢুকতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের শুরু হয়েছিল, তা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভের কারণে গত সপ্তাহে রাজ্যজুড়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

তবে গত সোমবার থেকে কর্ণাটকে ফের স্কুল খুলেছে। এসময় রাজ্যটির একাধিক স্কুলে হিজাব পরিহিত মুসলিম ছাত্রীদের ঢুকতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। এরইমধ্যে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে কর্ণাটকে প্রি-ইউনিভার্সিটি ও ডিগ্রি কলেজগুলো খুলেছে এবং এদিনও হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। অন্যদিকে বুধবার ফের হিজাব বিতর্ক নিয়ে কর্ণাটক হাইকোর্টে শুনানি শুরু হবে। রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে বাগালকোট, ব্যাঙ্গালোর, চিক্কাবাল্লাপুরা, গাদাগ, শিবমোগা, তুমকুর, মাইসোর, উদুপি ও দক্ষিণ কন্নড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

এনডিটিভি বলছে, উত্তর কর্ণাটকের বিজয়পুরা জেলায় অবস্থিত গভর্নমেন্ট পিইউ কলেজে বুধবার হিজাব পরিহিত অবস্থায় কোনো ছাত্রীকেই শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। যদিও এই কলেজটিতে আগে হিজাব পরেই শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারতেন ছাত্রীরা।

অবশ্য গভর্নমেন্ট পিইউ কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক পরার ব্যাপারে আদালতের দেওয়া অন্তর্বর্তী আদেশই পালন করছেন তারা। তবে ছাত্রীদের অভিযোগ, বোকা বা হিজাব পরে যে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না সেটি আগে থেকে তাদেরকে অবহিত করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই’কে বুধবার কর্ণাটকের এক মুসলিম ছাত্রী বলেন, আমরা ক্লাস করতে এসেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, ভেতরে ঢুকতে হলে বোরকা ও হিজাব খুলতে হবে। আমরা বোরকা খুলে ক্লাসে প্রবেশ করতে রাজি আছি, কিন্তু হিজাব খুলবো না।

এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বুধবার কর্ণাটকে কলেজ খোলার পর রাজ্যজুড়ে একাধিক জায়গায় অশান্তির খবর পাওয়া গেছে। কর্ণাটকের শিবমোগায় ৩০ জন মুসলিম ছাত্রী হিজাব পরে আসায় তাদেরকে কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। পরে হিজাব খুলতে বলায় তারা কলেজ চত্বর থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন।

মুসলিম শিক্ষার্থীদের দাবি, এতোদিন তারা ক্লাসরুমে হিজাব পরেই আসতেন। কিন্তু কর্ণাটক হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পরই বুধবার তাদের হিজাব পরে প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের কথা অনুযায়ী ছাত্রীরা হিজাব খুলতে অস্বীকার করে এবং কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

অন্যদিকে অশান্তির আশঙ্কায় কর্ণাটকের বাগালকোট, ব্যাঙ্গালোর, চিক্কাবাল্লাপুরা, গাদাগ, শিবমোগা, তুমকুর, মাইসোর, উদুপি ও দক্ষিণ কন্নড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। একাধিক কলেজের সামনে বিশাল সংখ্যক পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। কলেজের ২০০ মিটারের মধ্যেও জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কর্ণাটকের বিভিন্ন স্কুল কলেজে একদিকে হিজাব পরে ক্লাস করার অনুমতির দাবিতে আন্দোলন করছে মুসলিম ছাত্রীরা। অন্যদিকে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া ওড়না পরে হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে।

কর্ণাটকের স্কুল-কলেজে হিজাব পরা মুসলিম মেয়েদের ঢুকতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল, তা বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যটির সীমানা ছাড়িয়ে দেশটির বাকি অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। হিজাবে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে। মুখ খুলেছেন দেশটির বড় বড় রাজনীতিক ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরাও।

কর্ণাটকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ছয়জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করার পর। সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের  ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও তাদের ছাত্র সংগঠন।

উদুপির এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের মান্দিয়া এবং শিভামোগগা এলাকায়। সেখানকার কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব নিষিদ্ধ করে। যদিও আইনে হিজাব পরে মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসে আসতে কোনও বাধা নেই।

টিএম