মালয়েশিয়ার নারী ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মন্ত্রী সিতি জাইলাহ মোহাম্মদ ইউসুফ

স্বামী চাইলে অবাধ্য স্ত্রীকে ‘মৃদু মারধর’ করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার এক নারী মন্ত্রী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির ওই নারী মন্ত্রীর দাবি, সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে স্ত্রীকে হালকা মারধর করতে পারেন স্বামীরা। গত বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এবং দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

ঘরোয়া বা পারিবারিক সহিংসতার মাধ্যমে নারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ নিয়ে যখন গোটা বিশ্বে আন্দোলন চলছে, যখন নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সরব হচ্ছেন তখন স্বামীদের উদ্দেশে মালয়েশিয়ার ওই মন্ত্রীর পরামর্শ বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, মালয়েশিয়ার ওই নারী মন্ত্রীর নাম সিতি জাইলাহ মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি মালয়েশিয়ার নারী ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মন্ত্রী। দেশের মানুষের উদ্দেশে সম্প্রতি তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিওবার্তা দেন। সেখানেই তাকে স্ত্রীকে হালকা মারধরের বিষয়ে এই মন্তব্য করতে দেখা যায়। অবশ্য একজন নারী মন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর অনলাইনে অনেকেই সমালোচনা শুরু করেছেন।

তিনি বলেছেন, স্বামীর উচিত স্ত্রীকে বুঝিয়ে দেওয়া যে তিনি প্রয়োজনে কঠিন হতে পারেন। স্ত্রীর চারিত্রিক পরিবর্তন চান স্বামী, তাও বুঝিয়ে দেওয়া উচিত স্বামীর। মালয়েশিয়ার জনগণকে সংসারিক বিষয়ে পরামর্শ দিতেই ইনস্টাগ্রামে একটি দু’মিনিটের ভিডিও পোস্ট করেন নারী ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মন্ত্রী সিতি জাইলাহ ইউসুফ।

যেখানে তিনি বলেন, ‘উশৃঙ্খল ও একগুঁয়ে স্ত্রীদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে স্বামীদের উচিত প্রথমে স্ত্রীর সাথে কথা বলা, তাকে পরামর্শ দেওয়া। কিন্তু যদি এরপরও স্ত্রী স্বামীর পরামর্শ না মানেন তাহলে আলাদা বিছানায় শোয়া উচিত তাদের।

‘মাদার্স টিপস’ নামে প্রকাশিত এই ভিডিওতে সিতি ইউসুফ আরও বলেন, ‘এরপরও কথা না শুনলে বা ব্যবহার পরিবর্তন না করলে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারেন স্বামী। মৃদু মারধরও করতে পারেন। এর ফলে স্ত্রীর কাছে স্বামীর কঠোরতা প্রকাশ পাবে এবং স্ত্রী অনুভব করতে পারবেন যে, স্বামী কতটা তার পরিবর্তন চায়।’

সিতি জাইলাহ মোহাম্মদ ইউসুফ দেশটির ‘পার্টি ইসলাম সে-মালয়েশিয়া’ নামের একটি দলের আইপ্রণেতাও। মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে ইসলামিক এই দলটি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত। স্বামীকে সুখে রাখতে স্ত্রীদের প্রতি বেশ কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

তার পরামর্শ, স্বামী অনুমতি দিলেই তবেই তার সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলুন। সিতি ইউসুফের ভাষায়, ‘স্বামীর নামাজ ও খাওয়া-দাওয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর যখন তিনি (স্বামী) শান্ত ও অবসর সময় কাটাচ্ছেন, তখন তার সঙ্গে কথা বলুন। কোনো বিষয়ে কথা উত্থাপনের আগে অনুমতি চেয়ে নিতে হবে।’

এদিকে নারী ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মন্ত্রী ইউসুফের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে নারী অধিকার রক্ষায় কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা। জয়েন্ট অ্যাকশন গ্রুপ ফর জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি (জেএজি) নামে একটি সংস্থা জানিয়েছে, ‘পারিবারিক সহিংসতাকে’ স্বাভাবিক রূপ দেওয়ার জন্য ডেপুটি মন্ত্রীর উচিত এখনই পদত্যাগ করা।’

টিএম