জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশনস সিস্টেম বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মতিয়ার রহমান বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার (জেনারেল) এ কর্মরত আছেন। এর আগে এনএসআই কর্মরত ছিলেন। তিনি ৪০তম বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস (বি‌সিএস) পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে (হিসাববিজ্ঞান) দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন।

বিসিএস ও বিভিন্ন চাকরি ( বাণিজ্যিক ব্যাংক, দুদক, এনটিআরসি ইত্যাদি) পরীক্ষায় তার প্রস্তুতি ও কৌশলী লেখাপড়ার গল্প শুনেছেন ঢাকা পোস্ট এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মাহমুদ তানজীদ। 

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
মতিয়ার রহমান : বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) প্রস্তুতি নেওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আলাদা করে পড়ালেখা করতে হয়নি। তবে ব্যাংকের বিগত সালের প্রশ্নগুলো সমাধান করেছিলাম। সঙ্গে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিগত বছরের প্রশ্নও সমাধান করেছি। বিসিএস প্রস্তুতির জন্য ইংরেজি, গণিত, বাংলা, কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি এবং সাধারণ জ্ঞান মূলত আগেই সম্পন্ন হয়েছিল। ফলে আলাদা করে পড়তে হয়নি।

ঢাকা পোস্ট : বলা যায়, বিসিএস ও ব্যাংক চাকরির প্রস্তুতির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই- 
মতিয়ার রহমান : বর্তমানে ব্যাংক ও বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য সত্যিকার অর্থেই নেই। কারণ বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত সিলেবাস সম্পন্ন করলেই ব্যাংকের অধিকাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন  হয়ে যায়।

বিষয়টি খোলাসা করেই বলি; ব্যাংকের প্রিলিমিনারিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, কম্পিউটার ও সাধারন জ্ঞান থেকে প্রশ্ন করা হয়।বিসিএস প্রিলিমিনারি সিলেবাসও একই। তবে ব্যাংকে পরীক্ষায় ইংরেজি এবং গণিতে তুলনামুলক বেশি প্রশ্ন করা হয়। কার্যতই দু’টি বিষয়ে আলাদা করে প্রস্তুতি নিতে হয়। তবে যাদের বেসিক ভালো তাদের জন্য সমস্য হয় না।

অন্যদিকে, ব্যাংকের লিখিত পরিক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে ফোকাস রাইটিং ( রচনা/Essay, Report Writting, Summary ) সাধারণ জ্ঞানমূলক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, অনুবাদ, গণিত ও ইংরেজি অনুচ্ছেদ ধরনের প্রশ্ন আসে। বিসিএসের ক্ষেত্রেও ইংরেজিতে অনুবাদ , Essay থাকে। আবার গণিত, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়বলিতেও সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন থাকে যা ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও কাজে লাগে।

মতিয়ার রহমান বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার (জেনারেল) এ কর্মরত আছেন

ঢাকা পোস্ট : দু’টি নিয়োগ পরীক্ষার জন্যই যথেষ্ট পড়াশোনা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কিছুটা কৌশলী হয়ে পড়েছেন। আপনার পড়াশোনার কৌশল সম্পর্কে জানতে চাই- 

মতিয়ার রহমান : প্রথমত, সবসময় টার্গেট নিয়ে পড়ালেখা করতাম। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পড়া শেষ করার জন্য বিষয়গুলো ছোট ছোট কাগজে লিখে নিজের টেবিলে রেখে দিতাম। সেখানে কত সময়ের মধ্যে শেষ করবো সেটাও লিখে রাখতাম। 

দ্বিতীয়ত, পরীক্ষার কিছুদিন আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে আড্ডা বা অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতাম।

তৃতীয়ত, যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষার পূর্বেই সেই পরীক্ষার বিগত বছরের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করতাম এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বইগুলো সংগ্রহ করতাম।

চতুর্থত, যে বিষয়গুলো কঠিন, সহজে আয়ত্ত্ব করা যায় না সেই বিষয়গুলোর জন্য প্রথমে রুট লেবেলের বই (নবম-দশম/একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির) থেকে পড়ে তারপর গাইড বইয়ের সাহায্য নিতাম।
 
এছাড়া বিভিন্ন মোটিভেশনাল ভিডিও, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের কাছ থেকে ‘জব প্রিপারেশন’ সম্পর্কিত গাইডলাইন নিয়েছিলাম।

ঢাকা পোস্ট : একাডেমিক পড়াশোনার পাশিপাশি চাকরির প্রস্তুতি নাকি একাডেমিক পাঠ শেষে প্রস্তুতি নেওয়া ভালো?

মতিয়ার রহমান : সবার চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ও ধরণ একরকম হবে না। সাধারণত অনার্সের পড়ালেখার সঙ্গে চাকরির পড়ালেখার মিল খুব একটা থাকে না। তাই অর্নাসের শেষ বর্ষ থেকেই চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। যাতে অনার্স সম্পন্ন হয়ে মাস্টার্স শেষ করেই একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কারণ পড়ালেখা শেষ করে বেকার হয়ে থাকলে অনেকের মধ্যে হতাশা এবং পারিবারিক চাপ চলে আসায়। তখন আর ছাত্র জীবনের মতো সেভাবে পড়াশোনা হয়ে উঠে না। ফলে নতুন প্রতিযোগিদের সঙ্গে চাকরির পরীক্ষায় নিজের সক্ষমতা যাচাই করা আরো কঠিন হয়ে পড়ে। 

ঢাকা পোস্ট: ভাইভা জন্যেও নিশ্চয়ই প্রস্তুতি ছিল। সেসব কীভাবে নিয়েছেন?

মতিয়ার রহমান : ভাইভার প্রশ্ন নির্ভর করে ভাইভা বোর্ডের ওপর। অনেকেই আছে, ভালো প্রস্তুতি থাকার পরেও ভাইভায় ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারে না। আবার অনেকে কিছু না পড়েও ভালো ভাইভা দিয়ে আসে। 

তবে ভাইভার বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাস থাকা খুব জরুরি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে অনেকের থেকে এগিয়ে থাকা সম্ভব।   

আমি ভাইভা পরীক্ষার জন্য সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ, দেশের অর্থনৈতিক বিষয়, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু, নিজ জেলা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং 
যে পদের জন্য আবেদন করেছেন ওই পদ সম্পর্কে জানাশোনা থাকতে হবে। 

এমটি/ আরআর