আনমনে গাওয়া ‘পানির নিচে ডলফিনটা ভাই জংগলের মতন’ রীতিমত ভাইরাল। সুরেলা এনিমেশন কনটেন্টটি গোটা-দেশে ছড়িয়ে পরে। মূলত ফেসবুক ও ইউটিউব মাধ্যমে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পায়। এসবের পেছনে আছেন শামীমা শ্রাবণী। যার পরিচয় এখন সাম্বা নামেই। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর। শুনিয়েছেন না বলা অনেক কথা।

ঢাকা পোস্ট: কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের শুরুটা কিভাবে হয়েছিল?

শামীমা শ্রাবণী : এসএসসিতে ভালো ফলাফল করতে পারিনি। এ কারণে মনে হয়েছিল পড়াশোনার বাইরে আমার অন্যকিছু করা প্রয়োজন। তাই ঢাকার কয়েকটি সুপার-শপের বিভিন্ন ইভেন্টে সেলসের কাজ করি। কিন্তু বয়সে অন্য সবার চেয়ে ছোট হওয়ায় একটা সমস্যা তৈরি হলো। যেমন; বস কিছু বললে আমি সহজেই নিতে পারতাম না।

তাছাড়া পড়াশোনার চাপ বাড়তে থাকায় ইভেন্টের কাজ আর নিতে পারছিলাম না। তখন সালমান মুক্তাদিরের ইউটিউবের কনটেন্ট ফলো করতে শুরু করলাম। দেখতে দেখতেই মাথায় আসলো আমিও এমন একটা কিছু শুরু করি। এই ভাবনা থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েশনে আসা। 

শুরুতে এই কাজটি যেমন সহজ মনে করেছিলাম, আদতে এমন না। ভিডিও বানাতাম, এডিট করতাম আবার সেসব আপলোড করে দেখতাম কারো কাছেই ঠিকভাবে রিচ হচ্ছে না। পরবর্তীতে এনিমেশন দিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করলাম। শুরুটা এভাবেই হলো..

ঢাকা পোস্ট : এনিমেশনে কনটেন্ট তৈরির কাজ কতটা কঠিন ছিল?
শামীমা শ্রাবণী : কঠিনতো ছিলই। আমি একটা কার্টুনকে সামনে আঁকবো আর বিহাইন্ড দ্যা সিনে সেটার ভয়েজ ওভার দেব। প্রথমত আমি এনিমেশন তৈরির বিষয়ে পারদর্শী ছিলাম না। এসব কোনো কোর্সও করিনি। তাও ইউটিউব দেখে দেখে শেখার চেষ্টার করলাম। যদিও ছোটবেলায় কাগজে কলমে আর্ট করতাম। সেটাতো আর কম্পিউটারের মাউসের মত কঠিন না। এদিকে শুরু হলো বড় বিড়ম্বনা, এসব গ্রাফিক্স-কার্ড ব্যতীত করা প্রায়ই অসম্ভব।

যে কারণে কম্পিউটারের মাউজে করতে গিয়ে কয়েকগুণ বেশি কষ্ট করতে হয়েছে। এমনও দেখা গেছে ছোট একটা-সার্কেল আঁকতে গিয়ে ১০ দশবার মাউস ঘুরিয়েছি, তাও পারছি না। পরে অবশ্য গ্রাফিক্স কার্ড, ট্যাব কিনেছি।

ঢাকা পোস্ট : আপনার সাথে ইয়ামিন নামের একটি শিশু ভয়েস দেয়, তার সম্পর্কে জানতে চাই-
শামীমা শ্রাবণী : ইয়ামিন হচ্ছে আমার বড় আপুর ছেলে। বয়স মাত্র ছয় বছর। সে ছোট থেকেই মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলতো। ইয়ামিনের কথা শুনে ঘরের সবাই হাসাহাসি করে।

তাই ভাবলাম, ইয়ামিনের এই কথাবার্তা কাজে লাগাই। পরবর্তীতে আমি ইয়ামিনের ভয়েস নেওয়া শুরু করলাম। এখানে আরেকটি বিষয়ে না বললেই নয়; আমি সবসময় স্ক্রিপ্টের প্রতি মনযোগী ছিলাম। কারণ অডিয়েন্স তখনই ভিডিও এবং কনভারসেশন শুনবে যখন কনটেন্টের স্ক্রিপ্ট ভালো হবে। শুরুর দিকে ইয়ামিনের ভয়েস নেওয়াটা কঠিন ছিল। তাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে করাতাম। 
এরমধ্যে টাইসন নামের কুকুরকে ঘিরে ইয়ামিনের দেওয়া একটা কনটেন্ট সবচেয়ে বেশি সাড়া পাই। আর এটাই হলো ‘পানির নিচে ডলফিনটা ভাই জংগলের মতন’।

ঢাকা পোস্ট : ইয়ামিনের গুনগুন করা এই বাক্যের কারণে অল্প সময়ের মধ্যে সবার কাছে পৌঁছে গেলেন। পেছনের গল্পটা জানতে চাই-

শামীমা শ্রবাণী : ইয়ামিনের এক জায়গায় ঘুরতে বের হয়েছিলাম। রাস্তার একপাশে সে ডলফিনের মত একটা খেলনা কুঁড়িয়ে পায়। সেটা বাসায় এনে সেকি খুশি! তো এটার দিকে তাকিয়ে কী ভেবে শিশুসুলভ মনে ছড়ার মত গেয়ে ওঠে 'পানির নিচে ডলফিনটা ভাই জংগলের মতন'। গুনগুন করে এই বাক্যটা শুনতে শুনতে বাসার সবাই প্রায়ই বিরক্ত হয়ে ওঠলো। তবে আমি বেশ মজা পাচ্ছিলাম। ভাবলাম ইয়ামিনের এই ছড়াটা আমার নতুন কনটেন্টে যোগ করি, সেটাই করলাম। কিন্তু এটা এতো জনপ্রিয় হবে কল্পনাও করিনি।

ঢাকা পোস্ট : সাধারণত কনটেন্ট ক্রিয়েটরাই স্ক্রিনে থাকেন। কিন্তু আপনি একদমই উল্টো। আপানকে প্রকাশ্যে দেখা যায় না। আসলে রহস্যটা কী?

শামীমা শ্রবাণী : কোনো রহস্য-টহস্য নাই। আমাদের কনটেন্ট যখন ভাইরাল হয়, তখন থেকেই বিভিন্ন সাংবাদিকরা ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছিল। সবাইকে বিনয়ের সাথে 'না' করেছিলাম। কোথাও ইন্টারভিউ দিতে চাইনি আমি। ক্যামেরার সামনে  নার্ভাস ফিল হয়। তাছাড়া নতুন মানুষের সঙ্গে ইজিলি কথাও বলতে পারিনা। এসব কারণেই আমি এনিমেশন করি। আমার ইউটিউব চ্যানেলে দেখবেন কখনো লাইভেও আসিনি। দেখা যায় যেটা বলতে চাই, সেটা ভালোভাবে গুছিয়ে বলতে পারিনা।

ঢাকা পোস্ট : এনিমেশন ঘরানার কনটেন্ট নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রেখেছেন নিশ্চিয় ?

শামীমা শ্রাবণী : আমি বিশ্বমানের এনিমেশন মুভি তৈরির স্বপ্ন দেখছি। বাস্তবিক ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে এটি অনেক কঠিন। তাও চেষ্টা করছি ওয়ার্ল্ড ডিজনি এনিমেশন স্টুডিওর মতো করে একটি প্রতিষ্ঠান বানাতে। সেখানে আমরা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করবো।