করপোরেট দুনিয়ার ম্যাজিক্যাল ফিগার সৈয়দ আলমগীর। ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীল বিপণন কৌশলে যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে মানুষের দৌড় গোঁড়ায় পৌঁছে দেওয়ার যাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে এই ব্যবস্থাপকের। নব্বইয়ের দশকে তার ‘শতভাগ হালাল সাবান’ স্লোগান একটি নতুন সাবানের ব্র্যান্ডকে বাজারের শীর্ষে তুলেছিল। দেশিয় বাজারে ফাস্ট মুভিং কনজ্যুমার খাতকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনেও তার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে তিনি আকিজ ভেঞ্চারস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিযুক্ত আছেন। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে তার। বলেছেন না বলা অনেক কথা-

ঢাকা পোস্ট : এসিআই ছেড়ে আকিজ ভেঞ্চারে যোগ দিয়েছেন বছর খানেক আগে। নতুন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই-

সৈয়দ আলমগীর :  আকিজ ভেঞ্চার কনজিউমারদের কাছে সুপরিচিত। প্রতিষ্ঠানটি অসুস্থ প্রতিযোগিতার চেয়ে পণ্যের গুণগত মানের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এশিয়ার যে কয়টি প্রতিষ্ঠান ফুড ফ্যাক্টরিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তার মধ্যে আকিজ ভেঞ্চার অন্যতম। ফলে দেশিয় বাজারের অন্যসব প্রতিষ্ঠান থেকে আমি আকিজকে এগিয়ে রাখবো। 

ঢাকা পোস্ট : হালাল সাবানের স্লোগান দিয়ে দেশের বাজারে প্রচারণার অন্যরকম এক বিপ্লব শুরু করেছিলেন। এর প্রভাব কী এখনো আছে?

সৈয়দ আলমগীর : আমাকে একটি ভালো সাবান তৈরি করতে বলা হয়েছিল। অন্যান্য সাধারণ সাবান তৈরি করা হতো শুকরের অথবা গরুর চর্বি থেকে। কিন্তু আমি সাবান তৈরিতে ব্যবহার করেছিলাম শাকসবজির ফ্যাট। আর হালাল দ্রব্যের চাহিদা পুরো পৃথিবী জুড়েই রয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই তখন আমি নাম দিয়েছিলাম হালাল সাবান। এ নিয়ে যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তখন থেকেই সাড়া পাচ্ছিলাম। এখন সেই কনসেপ্ট গোটা বিশ্বেই চলছে।

ঢাকা পোস্ট : আকিজ ভেঞ্চারের সিএসআর খাতে স্কুলসহ বেশ কয়েকটি ফাউন্ডেশন দিয়ে সামাজিক ও মানবিক কাজ করছে। এ সম্পর্কে অনেকই জানতে চায়। যদি বিস্তারিত বলতেন-

সৈয়দ আলমগীর : আকিজ ভেঞ্চারের লাভের একটি অংশ গরীব দু:খীদের মাঝে বণ্টন করা হয়। এই কাজটি আকিজ গ্রুপের ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে হয়ে থাকে। তাছাড়া সিএসআর খাতের অর্থ দিয়ে স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। সারাদেশে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ২৫৪টি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আকিজ ভেঞ্চার একটি। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীর মধ্যে কোন বিষয়গুলো থাকলে আকিজে চাকরি পাওয়া যাবে-

সৈয়দ আলমগীর : যেকোনো প্রতিষ্ঠানই যোগ্য প্রার্থীকে বগলদাবা করতে চাইছে। আকিজও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে প্রাথমিক ভাবে আমরা যোগ্যতাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তবে অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন আছে। চাকরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

আমরা নিয়মিত লোকবল নিয়ে থাকি। আমাদের ওয়েব সাইটে ক্যারিয়ার সংক্রান্ত বিভাগ রয়েছে। যেখানে নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যেকেউ চাইলে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আবেদন করতে পারবেন। 

নব্বইয়ের দশকে তার ‘শতভাগ হালাল সাবান’ স্লোগান একটি নতুন সাবানের ব্র্যান্ডকে বাজারের শীর্ষে তুলেছিল

ঢাকা পোস্ট :  মার্কেটিং দুনিয়ায় আপনি কয়েক যুগ ধরে কাজ করছেন। এখন তো মার্কেটিং খাতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ডিজিটালাইশেন হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। পুরো বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

সৈয়দ আলমগীর : সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এটিই প্রকৃতির নিয়ম। আমিও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করি। সময়ের চাহিদা অনুসারে মার্কেটিং কৌশল নির্ধারণ করি। এসব করে সফলও হয়েছে বেশ কয়েকবার। যেমন; ‘ফ্রুটস মানেই ফ্রুটিকা’ এই ধরনের স্লোগান নিয়েও কাজ করেছি।

ঢাকা পোস্ট : দেশিয় বাজারে অনেক বিদেশি কোম্পানি রয়েছে। তাদের সঙ্গে কীভাবে প্রতিযোগিতা করছেন-

সৈয়দ আলমগীর : বাংলাদেশে খাবার ও পানীয় পণ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ভ্যাট দিয়েছে আকিজ ভেঞ্চার। পণ্য বিক্রির পরিমাণের ভিত্তিতে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সর্বোচ্চ ভ্যাট দিয়ে থাকি। সুতরাং এটিই স্পষ্ট আমাদের বিক্রির পরিমাণ ছিলো সর্বোচ্চ এবং এটি দেশীয় ও বিদেশি সব কোম্পানির থেকে ছিলো বেশি। তাই এই মুহূর্তে আমরা মাল্টি-ন্যাশনাল হোক বা ন্যাশনাল হোক, সবদিকেই এগিয়ে রয়েছি।

ঢাকা পোস্ট : আকিজে যোগ দেওয়ার পর থেকে কী কী পরিবর্তন এনেছেন?

সৈয়দ আলমগীর : আমি যোগ দেওয়ার পর কয়েকটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছি। ১ বছরের মধ্যেই ১০ টি কোম্পানি আপনাদের সামনে নিয়ে আসতে পারবো। এরমধ্যে দুটি কোম্পানি বাজারে এসেছে, এতে নিত্য নতুন জিনিস সংযোজন হচ্ছে। মাস্টার-মাইন্ড পিপলসদের নিয়ে আরো কর্পোরেট উইং তৈরি করছি। মার্কেটিংয়ে কৌশলেও পরিবর্তন এনেছি।

আবার কিছু কিছু পণ্যের মোড়ক বদলে নতুন নতুন বিষয়গুলোকে সামনে এনেছি। পণ্যের মান আরও ভালো করতে কাজ করছি। আগামী ১০ বছরে আকিজ ভেঞ্চার হবে দেশের সেরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি। এতে ৩০ হাজার কোটি টাকার টার্ন-ওভার আসবে। সেখানে কম করে হলেও সোয়া লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।