ফ্রিল্যান্সার হয়ে আয় করতে চান?
নেই ধরাবাঁধা সময়। নেই কোনও অফিস। বাসায় বসে যখন খুশি তখন কাজ করা যায়। এমন পেশার নাম ফ্রিল্যান্সিং। তরুণ প্রজন্মের কাছে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পেশা। ১৯৯৮ সালে অনলাইনে মার্কেটপ্লেস খোলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ফ্রিল্যান্সিং। ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, বিষয়ভিত্তিক লেখালেখি বা ডাটা এন্ট্রিসহ আরও অনেক কাজ রয়েছে ফ্রিল্যান্সিংয়ে। ফলে বাংলাদেশের বেশিরভাগ তরুণ চাকরির আশা না করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি মনোযোগী হচ্ছেন।
বর্তমান তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার তৈরি করতে আগ্রহী হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার তৈরির জন্য যেকোনো একটি বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। তারপর সময় দিতে হবে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে। রীতিমতো গবেষণা করতে হবে। দীর্ঘ দিন যারা এ জগতে কাজ করে আসছেন তাদের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখতে হবে এবং অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে। নিজের প্রোফাইল সুন্দর করে সাজাতে হবে। ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হলে ভালো হয়। তবে কাজ চালানোর জন্য যতটুকু জানা প্রয়োজন ততটুকু জানলেই হবে।
বিজ্ঞাপন
ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে, অবশ্যই একটি মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। যেমন আপওয়ার্ক ডট কম, ফ্রিল্যান্সার ডট কম, গুরু ডট কম, ফাইভার ডট কম, গেটাকোডার ডট কমসহ আরও অনেক মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ রয়েছে। এসব মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খোলার পর নিজের প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। প্রোফাইলে নিজের দক্ষতার ব্যাপারে উল্লেখ করতে হয়। যাতে ক্লায়েন্ট আপনার দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পান ও আপনাকে কাজ দিতে উদ্বুদ্ধ হন। নিজের যেসব দক্ষতা রয়েছে সেসব দক্ষতা ঝালিয়ে নিতে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যদি সফলতা আসে তাহলে ক্লায়েন্টের জন্য অপেক্ষা করতে থাকুন। ক্লায়েন্টকে মেসেজ করুন ও দক্ষতার জানান দিন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজের বিড করতে হলে কিছু কাজ ফ্রি করে দিতে হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রথমত আপনার দক্ষতা পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ পাবে এবং দ্বিতীয়ত গ্রাহক বা ক্লায়েন্ট আপনার কাজের দক্ষতা টের পাবেন।
বিজ্ঞাপন
ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করার কিছু টিপস-
১. যেকোনো একটি বিষয়ে পারদর্শী হওয়া উচিত। বাংলাদেশে আউটসোর্সিং শেখানোর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সেসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে কাজ শেখার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ইউটিউবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের টিউটোরিয়াল দেখে হাতেকলমে শেখা যেতে পারে।
২. পারদর্শিতা ও দক্ষতা যে বিষয়ে রয়েছে সে বিষয় নিয়ে দুই-একটি কাজ করে রাখতে হবে। লেখালেখিতে দক্ষতা থাকলে আপনার লেখা কোনও আর্টিকেল প্রোফাইলে প্রকাশ করতে হবে। এতে ক্লায়েন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে।
৩. ওডেস্ক ডট কম, ফ্রিল্যান্সার ডট কমের মতো জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতা পরিমাপক নামে একটি পরীক্ষা দেয়া যায়। এতে অংশ নিলে সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়।
৪. ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ছাড়াও প্রোফাইল এবং নৈপুণ্যের ছোঁয়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ বা ফোরামে শেয়ার করতে পারেন। এর মধ্য দিয়ে প্রোফাইলের পরিচিতি বাড়বে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতা অর্জনে এটি সহায়ক।
৫. ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার তৈরির জন্য নিজের ব্র্যান্ডিং করতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের ওয়েবসাইট থাকা আবশ্যক। যেসব তরুণ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে চান সেসব তরুণ নিজের ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্র্যান্ডিং করেন।
৬. একজন ফ্রিল্যান্সারের কাছে ভালো-মন্দ যেকোনো প্রস্তাব আসবে। কিন্তু সব প্রস্তাবে রাজি হওয়া যাবে না। যে প্রস্তাব নিজের ক্যারিয়ার বা লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় সে প্রস্তাবে সাড়া দিলে সফলতা আসবে না।
৭. ফ্রিল্যান্সারকে নিজের জন্য কাজের একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আরামদায়ক ও সুরক্ষিত পরিবেশে যাতে কাজ করা যায় এবং কাজের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা যায় সে ব্যবস্থা ফ্রিল্যান্সারকেই করতে হবে।
আয় করবেন যেভাবে
যখন কাজ পাবেন তখন আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে। সাধারণত কাজ শেষে ক্লায়েন্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন। পেপ্যাল বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করা যায়। তাছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও ফ্রিল্যান্সাররা উপার্জিত টাকা পেয়ে থাকেন। বিকাশ, রকেট, নগদসহ আরও অনেক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারেন ফ্রিল্যান্সাররা।
এইচএকে/আরআর