ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বা সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নাম ডিজিটাল মার্কেটিং। একটা সময় পণ্য বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন কোম্পানিতে দক্ষ মার্কেটার নিয়োগ করা হতো। তিনি ভোক্তা সাধারণকে পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে অবগত করতেন।  সেই কাজটিই এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে হচ্ছে। আর এই কাজটি যিনি করেন, তাকে ডিজিটাল মার্কেটার বলা হয়।

প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কেউই এ পেশায় আসতে পারেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বা স্নাতক পাস করেও নিজেকে একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। তবে এর জন্য দরকার কিছু কায়দাকানুন। যেসব নিয়ে এই আয়োজন-

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে নিজের ওয়েবসাইটকে গুগল, ইয়াহু, বিং বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনের অনুসন্ধানের ফল পর্যালোচনা করা হয়। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করে কোনও ওয়েবসাইটকে প্রথম পাতায় আনা যায়। ধরুন, আমি ‘বেস্ট মোবাইল ফোন ইন বাংলাদেশ’ লিখে সার্চ করলাম। এতে বাংলাদেশের সেরা মোবাইল ফোনগুলো যেসব সাইটে রয়েছে সেসব সাইট আমার সামনে চলে আসবে। এসব সাইট প্রথম পাতায় আনতে যে কাজটি করা হয়েছে তা হলও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এস.ই.ও। ডিজিটাল মার্কেটাররা এস.ই.ও করার মধ্য দিয়ে ওয়েবসাইটকে প্রথম পাতায় নিয়ে আসেন। 

কনটেন্ট মার্কেটিং

প্রায়ই দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনও অনলাইন পত্রিকায় বা ব্লগ সাইটে প্রমোশনাল ব্লগ লেখানো হয়। ব্লগটিতে প্রতিষ্ঠানটি কেমন সেবা দেবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়। পাঠক বা গ্রাহক ব্লগটি পড়ে প্রতিষ্ঠানটির সেবা সম্পর্কে জানতে পারেন। এ প্রক্রিয়াটির নামই হলও কনটেন্ট মার্কেটিং। মার্কেটিংয়ের জন্য নিজের প্রচার-প্রসার তথা সেলফ ব্র্যান্ডিং করা জরুরি। সেই সঙ্গে অন্যদেরকে দিয়েও নিজের কথা বলিয়ে নিতে হবে। যদি নিজের ব্যাপারে নিজে লিখতে না পারেন তাহলে কোনও পেশাদারী ব্লগারকে দিয়েও লেখানো যায়। 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এদেশের অধিকাংশ মানুষ দিনের সিংহভাগ সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটিয়ে দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পণ্য বা সেবা সম্পর্কে গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। কোম্পানি যেসব পণ্য বিক্রি করতে চায়, ডিজিটাল মার্কেটাররা সেসব পণ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। এতে অনেক মানুষ সাড়া দেয়। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অনেক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। পণ্য বিক্রি বা ইভেন্টের প্রচারণার জন্য বর্তমান দুনিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ার জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া অনেকে ইভেন্টের প্রচার-প্রসারের জন্য প্রোফাইল ছবি ফিল্টার করে ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করেন। পোস্ট শেয়ারিং ও বুস্টিংও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি অংশ। 

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং

মানুষের কাছে জনপ্রিয় এমন কাউকে দিয়ে পণ্যের প্রচারণা চালানোর নাম ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং। বিখ্যাত খেলোয়াড়, অভিনেতা কিংবা কণ্ঠশিল্পীকে দিয়ে এই মার্কেটিং করা হয়। এখানে একটি মৌলিক বিষয় প্রণিধানযোগ্য আর সেটি হলও যে ব্যক্তির কথা সবাই শোনে এবং বিশ্বাস করে তাকে দিয়ে পণ্যের প্রচার করানো উচিত। যখন কারও প্রিয় তারকা পণ্যের ব্র্যান্ডিং করেন তখন গ্রাহকরা মনে করেন, অমুক তারকা অমুক পণ্য ব্যবহার করেন। তাহলে তিনিও সেই পণ্য ব্যবহার করবেন। 

ডিসপ্লে অ্যাডভার্টাইজিং

বিলবোর্ডের আপগ্রেডেড ভার্সন ডিসপ্লে অ্যাডভার্টাইজিং। ইন্টারনেট যখন ছিলও না তখন বিলবোর্ডে বড় আকারের ব্যানার টাঙিয়ে পণ্যের প্রচার-প্রসার করা হতো। অনলাইনে সবকিছু চলে আসার কারণে বিলবোর্ডের স্থান দখল করে নিয়েছে ডিসপ্লে অ্যাডভার্টাইজিং। অনলাইনে একসঙ্গে অনেকগুলো পণ্যের বিজ্ঞাপন করা যায়। ঢাকাসহ আরও অনেক শহরে পুরনো বিলবোর্ডের বদলে আধুনিক ডিসপ্লে বিলবোর্ড স্থান করে নিচ্ছে। আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশের কারণে মানুষ সহজেই এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিংয়ের মতো কাজ করলেও যিনি পণ্যের প্রসার করবেন তাকে খুব একটা জনপ্রিয় হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে নির্দিষ্ট কোনও ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা যায়। যেমন রান্না বিষয়ক ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যের প্রচার করা যায়। এর বিনিময়ে সেই ব্র্যান্ড মার্কেটারকে সম্মানী প্রদান করে থাকে।

উপার্জন করবেন যেভাবে

আকর্ষণীয় ও লাভজনক পেশা হিসেবে বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী এই পেশা অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিশেষ করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে মাসে ১০ থেকে ৮০ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব। এছাড়া এস.ই.ও. করে বছরে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা উপার্জন করা যায়। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ও ডিসপ্লে অ্যাডভার্টাইজিং করে বছরে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন করছেন অনেকে। 

এইচএকে/আরআর