পেশা হিসেবে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যুতসই সুযোগ সুবিধা ও আকর্ষণীয় বেতন থাকায় এ পেশার চাহিদা এখন তুঙ্গে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে চাইলে কোথায় পড়তে হবে, কেমন যোগ্যতা থাকা চাই কিংবা কোর্স শেষে চাকরির সুযোগ সুবিধা কেমন, সেসব নিয়েই এ আয়োজন-

ইউএস বাংলা গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত মোঃ রায়হান সোহাগ বলেন, ‘স্নাতক শেষে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের ফার্মে ভর্তি হয় তাহলে ৩ বছরের মধ্যে সিএ সম্পন্ন করা যায়। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পাসেও সিএ কোর্সে ভর্তি হওয়া সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে সিএ কোর্সটি ৪ বছর পড়তে হয়।’

মো: রায়হান সোহাগ জানান, তিনি এম. জেড. ইসলাম অ্যান্ড কো ফার্ম থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পাস করেন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তার সিএ অধ্যয়ন শেষ হয়। 

তিনি বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন ফার্মে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকার কয়েকটি ফার্ম এ. বি. সাহা অ্যান্ড কো, এ. বি. এস. চৌধুরী অ্যান্ড কো, এ. হক অ্যান্ড কো, এ. হোসেন অ্যান্ড কো, এ. কে. আজাদ অ্যান্ড কো, এ. কে. দেব অ্যান্ড কো, এ. মান্নান অ্যান্ড কো, এ মাটিন অ্যান্ড কো উল্লেখযোগ্য।  

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিয়োগ দেয়। চলুন তাহলে জেনে নিই, সিএ পড়ে যেসব পদে কাজের সুযোগ রয়েছে-

অডিটর

অডিটরের কাজ হলও কোম্পানির ফাইন্যান্স দেখাশুনা করা। ফাইন্যান্সের নির্ভুলতা যাচাই করার মাধ্যমে কোম্পানির অর্থনৈতিক গতিশীলতা ঠিক রাখাই তাদের কাজ। একটি কোম্পানিতে একাধিক অডিটর থাকে। এছাড়া কিছু কোম্পানি ইন্টার্নাল অডিটরও নিয়োগ করে থাকে। 

অ্যাকাউন্টস ক্লার্ক

কোম্পানির আর্থিক লেনদেনের হিসাবগুলো যথাযথভাবে রাখাই অ্যাকাউন্টস ক্লার্কের কাজ। কোম্পানির লেনদেন ও কোম্পানির কোন প্রকল্পে কত বিনিয়োগ করা হবে সেটি একজন অ্যাকাউন্টস ক্লার্ক হিসাব রাখেন। 

বিজনেস সার্ভিসেস অ্যাকাউন্ট্যান্ট

বিজনেস সার্ভিসেস অ্যাকাউন্ট্যান্টের মূল দায়িত্বর হলও ক্লায়েন্টকে ব্যবসা ও ট্যাক্স পরিষেবা দেওয়া। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সম্পদের অপচয় তথা মূল্য কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ তিনি করেন। একজন বিজনেস সার্ভিসেস অ্যাকাউন্ট্যান্ট কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কোম্পানি পরিচালনায় তার ভূমিকা অনেক বেশি। 

চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার

চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। কোম্পানির সাফল্য ও ব্যর্থতা তার নির্দেশের ওপরেই নির্ভর করে। একজন চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার দক্ষভাবে পরিচালনার মাধ্যমে কোম্পানির সফলতা আনেন। অন্যদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি কোম্পানি পরিচালনা করেন এবং কোম্পানিকে লাভবান করার জন্য তিনি অনেক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। 

কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস

কোম্পানির নানা ধরনের ব্যয়ের হিসাব রাখা কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টসের দায়িত্ব। এছাড়া ব্যবস্থাপনা বিভাগকে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দেয়াও তার দায়িত্বের অংশ

ফিন্যান্সিয়াল কন্ট্রোলার

নির্বাহী ব্যবস্থাপনা বিভাগের সঙ্গে ফিন্যান্সিয়াল কন্ট্রোলাররা সম্পৃক্ত থাকেন। এমনকি ব্যবসা সফলতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য তারা দায়িত্ব পালন করেন। একটি কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ ফিন্যান্সিয়াল কন্ট্রোলার। এ পদে একাধিক ব্যক্তি কর্মরত থাকতে পারে। দক্ষভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করেন তারা। 

এছাড়াও, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতে পারেন। তারা যে কোম্পানিতেই চাকরি করেন না কেন তাদের বেতন অন্যদের তুলনায় বেশিই হয়। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, সরকারি কোম্পানি, স্টক ব্রোকিং ফার্ম, ফাইন্যান্স কোম্পানি, লিগ্যাল ফার্ম, প্যাটেন্ট ফার্ম, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিসহ আরও অনেক ধরনের কোম্পানিতে কাজ করতে পারেন একজন সিএ বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। 

সিএ পড়তে কেমন খরচ হয়?

সিএ কোর্সে মোট তিনটি স্তর রয়েছে। প্রথম স্তর নলেজ, দ্বিতীয় স্তর অ্যাপ্লিকেশন ও তৃতীয় স্তর অ্যাডভান্সড স্টেজ। নলেজ ও অ্যাপ্লিকেশন স্তরে পড়াশুনা করতে হয় সাতটি বিষয়ে আর অ্যাডভান্সড স্টেজ স্তরে পড়াশুনা করতে হয় তিনটি বিষয়ে। ভর্তি থেকে শুরু করে ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত সিএ পড়তে প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়। 

চাকরিতে বেতন কেমন?

বাংলাদেশে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে পেশাজীবন শুরু করার পর বেতন সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে। উর্ধ্বতন পদে উন্নীত হওয়ার পর আরও মোট অঙ্কের বেতন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পেশায় ১০ লাখ টাকা উপার্জন করা সম্ভব। 

এইচএকে/ আরআর