সমন্বিত ৮ ব্যাংকের ২৪৭৮ নিয়োগ সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক লোকবল নেবে। বেসরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার ধরন আলাদা হলেও সমন্বিত ব্যাংকগুলোর নিয়োগ পরীক্ষার ধরন একই। প্রথমে বহু নির্বাচনী পরীক্ষা, এরপর লিখিত ও সবশেষ মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষ নেওয়া হয় ব্যবহারিক পরীক্ষাও। প্রতিটি পরীক্ষায় আলাদা আলাদা উত্তীর্ণ হতে হয়। ফলে প্রতিটি স্তরের জন্যই চাই যুতসই প্রস্তুতি। একটু এদিক-সেদিক হলেই তীরে এসে তরী ডুববে!

সময় নেই। আমার দ্বারা কিছুই হবে না। এসব নেতিবাচক চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই। তার আগে জানা দরকার পরীক্ষার নম্বর বণ্টন সম্পর্কে। আগেই বলেছি, পরীক্ষা হবে তিনটি ভাগে। প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের দিতে হবে লিখিত পরীক্ষা। সেখানে থাকতে ২০০ নম্বর। প্রশ্নের ধরন অনুসারে কখনো লিখিত পরীক্ষার নম্বর কম বা বেশি হতে পারে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মিলবে ভাইভা দেওয়ার সুযোগ। মাত্র ২৫ নম্বরের এই পরীক্ষায় টিকে গেলেই হবে স্বপ্ন পূরণ। মিলবে সোনার হরিণ।

এমসিকিউ প্রস্তুতি যেভাবে

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য পর্যায়ক্রমে সব বিষয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। সময় কম, দৈনন্দিন রুটিন ঠিক করে ফেলুন। প্রতিদিনের প্রস্তুতিতে যেমন ভালো হবে প্রস্তুতি, তেমনি বাড়বে আত্মবিশ্বাসও। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ ইংরেজিতে দক্ষ কিন্তু গণিতে একটু দুর্বল। আবার কেউ গণিতে দক্ষ, তবে ইংরেজিতে কাঁচা। শুধু ব্যাংকের চাকরিই নয়, অধিকাংশ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করার মূলমন্ত্র ‘ইংরেজি’ ও ‘গণিত’ ভালো করা। বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ ও সমাধানের পর ইংরেজি ও গণিতে বাড়তি সময় দিন। 
ইংরেজিতে Synonyms, Antonyms, Analogy, Fill in the blanks, Sentence correction, Sentence convert/change, ইংরেজি সাহিত্যসহ ইত্যাদি টপিক থেকে প্রশ্ন থাকে।

গণিতে দুর্বলতা থাকলে এ নিয়ে ভয় না পেয়ে অনুশীলন চালিয়ে যান। সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির গণিত বই থেকে বেসিক ঝালাই করে নিতে পারেন এ সময়ে। গণিত বুঝে বুঝে অনুশীলন করুন, মুখস্থ করতে গেলে বাড়তে পারে বিপদ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য অল্প সময়ে অনেক অঙ্কের সমাধান করতে হয়, এ জন্য শর্টকাট টেকনিক শিখতে হবে। নিয়মিত অনুশীলনে কেটে যাবে গণিত ভীতি।

কম্পিউটার ও বিজ্ঞানকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। গণিত ও ইংরেজির কোনও বিষয়ে একটু দুর্বলতা থাকলে কম্পিউটার, তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে এগিয়ে থাকতে পারবেন। তাই এ বিষয়ের প্রস্তুতি সময়মতো ঝালিয়ে নিন। বিগত সালের প্রশ্ন, এসএসসি ও এইচএসসির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বই এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন।

বাংলা, সাধারণ জ্ঞান, মানসিক দক্ষতা প্রভৃতি বিষয়ে পড়তে হবে জোরালো ভাবে। বাংলার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ব্যাকরণ অংশে। ব্যাকরণ অংশে ভালো প্রস্তুতির জন্য মুনীর চৌধুরী রচিত নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইটির এখনো কোনও বিকল্প নেই।
বাংলা সাহিত্য অংশে গুরুত্বপূর্ণ ১০-১২ জন সাহিত্যিক সম্পর্কে ধারণা রাখলে আর চাকরির পরীক্ষায় আসা আগের বছরগুলোর প্রশ্ন সমাধান করলে সহজেই প্রিলিমিনারিতে ভালো করা যেতে পারে।

লিখিত পরীক্ষার জন্য কেমন প্রস্তুতি

লিখিত পরীক্ষা নিয়ে সবার মধ্যেই একটি ভয় কাজ করে। কি লেখব, কীভাবে লেখব- ইত্যাদি। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা কৌশলী হয়ে প্রস্তুতি নিলে সাফল্য আসবে। সাধারণত এ অংশে অনুবাদ, গণিত, বাংলা ও ইংরেজিতে সংক্ষিপ্ত রচনা থাকতে পারে। তাই নিয়মিত লেখার অভ্যাস করতে হবে। এ জন্য ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয় কলামগুলো নিয়মিত পড়লে ভালো কাজে আসে। এ ছাড়া মানসম্মত ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস থাকলে বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়ে, তাই সুবিধা পাওয়া যায় লিখিত অংশে।

মৌখিক পরীক্ষার টুকিটাকি

মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্নকর্তা কি জানতে চান, তা আগে ভালোভাবে শুনুন; তারপর বলুন। অন্য যেকোনো চাকরির মতো ব্যাংকের নিয়োগ ভাইভাও সাবলীল প্রকাশভঙ্গী, আত্মবিশ্বাস ও আগ্রহের বিষয়টির জন্য করা হয়। নিজের পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যাংকের প্রতি আগ্রহের কারণ, ভবিষ্যৎ পেশা পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয়ে গুছিয়ে বলার অনুশীলন করতে হবে। বিশেষ করে নিজের পড়াশোনার বিষয়ে ধারণাটা স্পষ্ট থাকা দরকার।

সবশেষে একটি কথা মনে রাখতে হবে- দিনভর একই বিষয় পড়তে হয়তো ভালো লাগবে না। বিরক্তিও চলে আসতে পারে। তাই দিনের কখন কোনও বিষয় পড়বেন, তার রুটিন তৈরি  করে নিন। নিজের সুবিধা অনুযায়ী সময় ও বিষয় ভাগ করে নিতে হবে। আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই সারা দিন কি কি পড়লেন, সেগুলো স্মরণ করার চেষ্টা করতে হবে।