সবজান্তা শমসের মত সার্চ ইঞ্জিন গুগল জানে না এমন কোন তথ্য নেই। ইন্টারনেট দুনিয়াতো বটেই, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কর্মনীতিতেও আমূল পরিবর্তন এনেছে গুগলের সার্চ বক্সটি। যেখানে হাল সময়ের তথ্য থেকে শুরু করে কয়েক হাজার বছর আগের দিনপঞ্জিও মেলে কয়েক সেকেন্ডে। এ যেন জাদুর কাঠি। 

১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে গুগলের জন্ম দেন আমেরিকান দুই তরুণ। একজন ল্যারি পেজ, অন্যজন সের্গেই ব্রিন। দুজনই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ছাত্র থাকাকালীন সময়ে গুগল নিয়ে কাজ শুরু করেন। অদম্য ইচ্ছা আর নিত্যনতুন সংযোজন ও বিয়োজনের ফলে ক্যাম্পাসের করিডোর থেকে গুগল আজকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছে।

গুগলের সার্চ সেবার পাশাপাশি গুগল ডক, শিট ও স্লাইড, জিমেইল, গুগল ক্যালেন্ডার, ক্লাউড স্টোরেজ, গুগল প্লাস, ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং ও ভিডিও চ্যাট, গুগল হ্যাংআউট, গুগল ট্রান্সলেট, গুগল ম্যাপস, ইউটিউব, গুগল কিপ, গুগল ফটোজসহ বেশকিছু সেবা রয়েছে। গুগল সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ডাটা সেন্টারে প্রায় এক মিলিয়ন সার্ভার চালায়। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কোটির উপর অনুসন্ধানের অনুরোধ আসে গুগলের সার্চ বক্সে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে গুগল প্রায় ২৪ পেটাবাইট ডাটা প্রতিদিন প্রক্রিয়াকরণ করে।

সম্প্রতি ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন গুগলের জন্ম ইতিহাস নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করেছেন। স্মৃতি হাতড়ে সের্গেই ব্রিন বলেন,‘আমাদের সবসময়ই মনে হয়েছিল যে এরকম একটা উদ্যোগের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সে সময়টা আমাদের চিন্তা ছিল খুব ভালো সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করা, এবং যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।’

ল্যারি পেজের কথায়, ‘আমাদের মিশন ছিল বিশ্বের তথ্যকে সুবিন্যস্ত করা, যেখানে সারা দুনিয়ার লোক ঢুকতে পারবে, সবার উপকার হবে। আমার মনে হয়েছিল সারা পৃথিবীর জন্য এটা একটা দারুণ ব্যাপার হবে।’

ল্যারি ও ব্রিন যে সময়ে গুগল নিয়ে কাজ শুরু করেছিল, সেসময় মূলত সার্চ ইঞ্জিন বলে কিছুই ছিল না। সেসম এতো সহজে ইন্টারনেটে কিছু পাওয়া ছিল বেশ ঝামেলার। এমনকি তখন ইন্টারনেটে কিছু খুঁজে পেতে হলে হাতে তৈরি ইনডেক্স বা সূচি থেকে খুঁজে বের করা লাগতো। এমন সময় ল্যারি আর ব্রিন বুঝতে পারলেন, কেউ যখন কোন ওয়েবপেজ খুঁজছে তখন সেটা যে শুধু প্রাসঙ্গিক হতে হয় তাই নয়, বরং সেটা আগেকার ব্যবহারকারীদের চোখে মূল্যবান কিনা - তাও দেখা উচিত।

গুগলের আগে ব্যাকরাব নামে একটা সার্চ ইঞ্জিন চালু করেছিলেন পেজ ও ব্রিন। ব্যাকরাব তখন এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে প্রায়ই চাপ সামলাতে না পেরে স্ট্যানফোর্ডের ইন্টারনেট ক্র্যাশ করতো। এসময়ই এর দুই প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি ও সের্গেই ভাবলেন, কোম্পানির  নতুন নাম দরকার। সেজন্য তারা একটা 'ব্রেনস্টর্মিং' সভায় বসলেন। সেখানেই গুগল নামটির প্রস্তাব করা হয়।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা বোর্ডে লেখা হলও সেই নাম। ১৯৯৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর গুগল ডট কম ডোমেইন নামটি রেজিস্টার করা হলও। তার কিছুদিন পরই বেরুলো প্রথম গুগল ডুডল - অর্থাৎ গুগল লোগোতে কোন বিশেষ ব্যক্তি, ঘটনা বা দিনকে স্মরণ করে যে পরিবর্তন আনা হয় । প্রথম ডুডলটি ছিল একটি জ্বলন্ত মানুষ - যার অর্থ পেজ ও ব্রিন নেভাদার ‘বার্নিং ম্যান’ উৎসবে বেড়াতে গেছেন। এমন একটি ধারণা সাধারণ মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেলো। কারণ এসব তারা আগে কখনো দেখেনি। 

তবে গুগলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলও এর ইন্টারফেস। যেখানে দু’একটা শব্দ লিখলেই তথ্য চলে আসে। ফলে এই কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারও আকার দিন দিন হুহু করে বাড়তে থাকে। এরপর ২০০৪ সালে গুগল তাদের নতুন সদর দফতরে উঠে, যার নাম গুগলপ্লেক্স। সেই বছরই  কোম্পানিটি স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয়।

বর্তমানে গুগল আমাদের জীবনের সঙ্গে মিলে মিশে এক হয়ে গেছে। তারা বিজ্ঞাপন থেকে শত শত কোটি ডলার আয় করছে। তাদের বিরুদ্ধে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া, বাজারে একচেটিয়া প্রাধান্য কায়েম করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং চীনে তাদের বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের অভিযোগও উঠেছে। তবে তাদের বরাবরই ভালো একটি উদ্দেশ্য ছিল। সেটা হলও সাধারণ মানুষের তথ্য ব্যবহার সহজ করে দেওয়া।

সূত্র- বিবিসি বাংলা