বিসিএস ভাইভা: পুলিশের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী?
মো. সোহেল রানা
৪১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. সোহেল রানা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞানে স্নাতক পাস করে ৪১তম বিসিএসে অংশ নেন তিনি। তাকে ১৮-২০ মিনিটের মতো ভাইভা নেয়া হয়। সোহেল রানার প্রথম পছন্দ ছিল পুলিশ ক্যাডার, এছাড়াও পছন্দক্রমে ছিলো প্রশাসন, শুল্ক ও আবগারি, কর, নিরীক্ষা ও হিসাব, আনসার ক্যাডার। নিজের বিসিএস ক্যাডারের ভাইভার অভিজ্ঞতার প্রশ্নোত্তর নিয়ে লিখেছেন এই সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন: মো. সোহেল রানা এখন কি করছেন?
উত্তর: স্যার, আমি বর্তমানে Assistant Officer-হিসেবে এক্সিম ব্যাংকে কর্মরত আছি।
প্রশ্ন: মাস্ক খুলে ফেলুন। আমরা আপনাকে দেখতে চাই। আচ্ছা এক্সিম ব্যাংকের পূর্ণ নামটা কি বলুনতো?
উত্তর: স্যার, Export Import Bank of Bangladesh Limited.
চেয়ারম্যান স্যার: ফার্স্ট এক্সটার্নালের দিকে তাকিয়ে বললেন,"এরা কি শুধু এক্সপোর্ট ইমপোর্ট নিয়ে কাজ করে নাকি স্বাভাবিক ব্যাংকিং করে?"
এক্সটার্নাল -১: স্যার, নামগুলো শুধু ভিন্ন কিন্তু সবাই স্বাভাবিক ব্যাংকিং-ই করে। আমি স্যারের সাথে শুধু সুর মিলিয়ে ছিলাম।
প্রশ্ন: আচ্ছা বলুনতো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটি সংবিধানের কোথায় বলা আছে?
উত্তর: স্যার, ৬ষ্ঠ তফসিলে।
প্রশ্ন: সংবিধানে কোথায় স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার কথা আছে?
উত্তর: স্যার,৫৯ ও ৬০ নং অনুচ্ছেদে।
প্রশ্ন: এই দুটি অনুচ্ছেদে কি বলা আছে পড়েছেন কখনো?
উত্তর: জ্বি স্যার পড়েছি। বলুনতো শুনি। স্যার, এক্সার্টলি এই মুহূর্তে বলতে পারব না।
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন: আচ্ছা আপনিতো ব্যাংকে কাজ করেন...বলুনতো What is LC?
উত্তর: স্যার, বাংলায় বলি। ঠিক আছে বলুন। স্যার, Letter of Credit কে সংক্ষেপে LC বলা হয়। আমদানিকারকের পক্ষে এবং রপ্তানিকারকের অনুকূলে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে আমদানিকারকের ব্যাংক যে পত্র ইস্যু করে তাকে LC বলে।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম পছন্দ দেখতেছি বিসিএস পুলিশ?
উত্তর: জি স্যার।
প্রশ্ন: আচ্ছা বলুনতো পুলিশের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: স্যার, অপরাধ দমন, প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এই কারণে বর্তমানে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা কিংবা বিট পুলিশিং ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সমাজের নানা অসংগতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করায় পুলিশের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে আমার মনে হয়।( ইন্সট্যান্ট মাথায় এটাই এসেছিল)
প্রশ্ন: আচ্ছা আর কি কি চ্যালেঞ্জ আছে?
উত্তর: স্যার প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত হওয়া....এরপর স্যার কয়েকটা নিজে থেকেই বলে দিয়েছিলেন।
এরপর চেয়ারম্যান স্যার এক্সটার্নাল-১ স্যারকে প্রশ্ন করার জন্য ইঙ্গিত করলেন)
প্রশ্ন: আচ্ছা সোহেল রানা বলুনতো কাবুল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি রোড করা হয়েছিল সেটির নাম কি?
উত্তর: কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললাম সরি স্যার এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না।
প্রশ্ন: গ্র্যান্ড ট্টাঙ্ক রোড।(স্যার বলে দিয়েছিলেন) আচ্ছা এটি কে করেছিলেন বলতে পারবেন?
উত্তর: স্যার, শেরশাহ।
প্রশ্ন: উনি আর কি করেছিলেন বলতে পারেন?
উত্তর: জ্বি স্যার, উনি ডাক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
প্রশ্ন: কী ভাবে?
উত্তর: স্যার, ঘোড়ার মাধ্যমে।
প্রশ্ন: আচ্ছা বাংলাদেশের কয়েকটি স্থলবন্দরের নাম বলুন?
উত্তর: স্যার, বেলাপোল, হিলি, বাংলাবান্ধা, বিলোনিয়া,বুড়িমারী, সোনা মসজিদ...
প্রশ্ন: মিয়ানমারের কাছের স্থলবন্দরটির নাম কি?
উত্তর: স্যার, টেকনাফ।
প্রশ্ন: আচ্ছা মিয়ানমার থেকে আমরা কি কি আমদানি করি?
উত্তর: স্যার পেঁয়াজ, শুঁটকি, ছোলা, কফি...
প্রশ্ন: আর কি কি?
উত্তর: সরি স্যার এই মুহূর্তে আর মনে করতে পারছি না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ কি কি বলে আপনার মনে হয়?
উত্তর: স্যার IMF বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদনের পরবর্তীতে মোটাদাগে তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হচ্ছে। এগুলো হলোঃ ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুদকে নির্দিষ্ট পরিমাণে উন্নীত করা।
প্রশ্ন: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় কি কি?
উত্তর: স্যার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছি।
প্রশ্ন: কি কি বলুনতো শুনি।
উত্তর: স্যার, রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করা, মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা ও প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।
প্রশ্ন: প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে যা মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রাখবে?
উত্তর: স্যার, এই পদ্ধতিতে সরকার একটি পণ্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করে দেন এবং ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেন যা সরাসরি মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রাখে।
(এরপর এক্সটার্নাল-১ স্যার এক্সটার্নাল-২ স্যারকে বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রশ্ন করার জন্য ইঙ্গিত করলেন)
প্রশ্ন: মুদ্রানীতিতে কি কি থাকে?
উত্তর: স্যার, ব্যাংক রেট, রেপো রেট, রিভার্স রেপো রেট নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: আচ্ছা বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ কত?
উত্তর: স্যার, ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার।( ওই দিন রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল যা প্রায় সবকটি পত্রিকাতেই নিউজটা পাবলিশ হয়েছিল। যার কারণে এটা সকালে পিএসসির সামনে থেকে পত্রিকা কিনে পড়ার সময়ই মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল)
প্রশ্ন: এই রিজার্ভের হিসেবটা কি IMF- এর স্ট্যান্ডার্ড মেনে হয়েছে?
উত্তর: স্যার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ( আইএমএফ) হিসেবে রিজার্ভের ৬০০ কোটি ডলার ব্যবহার যোগ্য নয়। শর্ত মেনে রিজার্ভের পরিমাণ হবে ২ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার।
প্রশ্ন: আচ্ছা আমাদের রিজার্ভের টাকা কোথায় কোথায় গিয়েছে জানেন কি?
উত্তর: স্যার, রিজার্ভ থেকে ২০ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ কিনতে সোনালী ব্যাংককে কিছু অর্থ দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: আর কোথায় গেছে?
উত্তর: সরি স্যার আমার আর জানা নাই।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মধ্যে কে আগে তাদের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: এটির উত্তর দিতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার রনিল বিক্রমাসিংহের কয়েকটি পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে আটকে যায় এরপর সরি বলি। তখন ওনি বলেন, সবাই সবকিছু জানবে না এটাই স্বাভাবিক।
এরপর চেয়ারম্যান স্যার কাগজপত্র নেওয়ার জন্য ইঙ্গিত করলেন এবং মাস্কের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন ঠিক আছে আপনি এখন আসুন। আমি ধন্যবাদ ও সালাম দিয়ে বের হয়ে আসলাম।