বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এফ কমার্স বা ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় ও চাহিদা সম্পন্ন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির মধ্যে অনেকেই ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায় চালু করেছেন। যদিও ফেসবুকে ব্যবসা পরিচালনার নিয়ম কানুন অনেকেই ঠিক মত জানেন না। ফলে কয়েকদিন পরেই দেখা দেয় নানা বিপত্তি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবসায় মুনাফা কমে যাওয়া। তাহলে চলুন আজ জেনে নিই, ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসা করার কায়দা কানুন-

প্রথমেই ফেসবুক বিজনেস পেজ চালু করতে হবে। ফেসবুক পেজ চালু হলে ব্যবসা সম্পৃক্ত কনটেন্ট তৈরি এবং কাস্টমারের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। কাস্টমার বাড়ানোর জন্য অনেকেই বুস্ট (ফেসবুক প্রমোশন) করেন। এছাড়াও একটি বিজনেস পেজকে সচল রাখার জন্য আপনাকে নিয়মিত কিছু কাজ করতে হবে। যেমন-

নিয়মিত মেসেজের উত্তর দিন

পেজের ইনবক্সে কেউ মেসেজ দিলে দ্রুত সময়ে মধ্যে উত্তর দিতে হবে। কেউ যদি মেসেজ করে উত্তর না পান, তাহলে ব্যবসায়িক সুনাম নষ্ট হয়। এতে ব্যবসায়ী নিজেই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এছাড়া কোনও কনটেন্টে যদি গ্রাহকরা মন্তব্য করেন তবে ব্যবসায়ীর উচিত সেই মন্তব্যের জবাব দেওয়া।

অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করুন

সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবসার সফলতা নির্ভর করে কত জন কনটেন্টটি দেখেছে তার ওপর। পেজ ভিউ, রিচ, এনগেজমেন্ট এবং আরও অনেক কিছু ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য জরুরি। গুগল অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে সহজেই এসব বোঝা সম্ভব। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবসায়ের গতি বোঝার জন্য অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করুন।

পাবলিশিং টুলস ব্যবহার করুন

ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট শিডিউল করে রাখার কাজে ব্যবহৃত হয় পাবলিশিং টুলস। ভবিষ্যতে কোনও সময়ে লাইভে গেলে কিংবা ব্যবসার বিজ্ঞাপন ও ইভেন্টের প্রচারের জন্য ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে শিডিউল করে রাখলে ভবিষ্যতে সেটা পোস্ট হয়ে যাবে। 

টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে জানুন

ফেসবুকে অনেক টার্গেটিং টুলস রয়েছে। যখন আপনি কোনও পোস্ট বুষ্ট করবেন, তখন আপনাকে নির্দিষ্ট ডেমোগ্রাফি, লোকেশন এবং গ্রুপকে টার্গেট করতে হবে। একটি সফল বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি।

গ্রাহকদের উপযোগী বিজ্ঞাপন তৈরি করুন

গ্রাহকরা আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখার জন্য বসে নেই। তাই কেবল প্রচারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন নয়, সেটিকে গ্রাহকদের উপযোগী করে তুলুন।

প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন

ফেসবুকে ট্র্যাফিক পাওয়া সহজ নয়। তবে নিয়মিত প্রতিযোগিতার আয়োজন করলে সেটি সহজ হয়। তবে ফেসবুকে প্রতিযোগিতার আয়োজনের সময় বেশ কিছু নীতিমালা মানতে হবে। নইলে পড়তে হবে ঝামেলায়।

ইভেন্টের প্রচার করুন

ফেসবুকে আপনি ইভেন্ট তৈরি করতে পারেন। সেখানে আপনি যেকোনো মানুষকে ইনভাইট করতে পারেন। এতে আপনার ইভেন্ট এবং ব্যবসা সম্পর্কে একসঙ্গে অনেক মানুষ জানতে পারবেন। গ্রাহকদের কাছে আনার জন্য অনেকেই ইভেন্ট তৈরি করেন।

প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট শেয়ার করুন

ব্যবসার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক এমন কনটেন্ট শেয়ার করুন। কনটেন্টটিতে কপি-পেস্ট লেখা থাকা যাবে না। ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গতি নেই এমন কনটেন্ট পেজে প্রকাশ করলে রিচ এবং এনগেজমেন্ট কমে যায়।

মন্তব্যের জবাব দিন

কনটেন্টের ব্যাপারে কেউ কোনও মন্তব্য করলে অথবা কারও কোনও প্রশ্ন থাকলে তার জবাব দিতে হবে। এতে কনটেন্টের রিচ বাড়তে থাকে। অনুসরণকারীদের প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দিলে তারা আপনার পণ্য কিনতে উৎসাহী হবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ফেসবুক নিউজফিড অ্যালগরিদমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেয়। এসব পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম ছিল পারসোনাল কানেকশন এবং এনগেজমেন্ট। তাই কনটেন্টের কানেক্টিভিটি এবং এনগেজমেন্ট বাড়ানো জরুরি। 

কোম্পানির মাইলস্টোন তুলে ধরুন

কোম্পানির মাইলস্টোন এবং ফেসবুকের অ্যানিভার্সারিগুলো শেয়ার করতে থাকুন। এর মাধ্যমে অনুসরণকারীদের বেশি বেশি এনগেজ করা সম্ভব।

ফেসবুক অ্যাড ব্যবহার করুন

ফেসবুক অ্যাডের মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা যায়। তবে এর জন্য কিছু অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। অ্যাডের জন্য আপনি বাজেট তৈরি করতে পারেন।

ফেসবুক ভিডিও তৈরি করুন

ফেসবুকে অসংখ্য ভিডিও প্রকাশ হয়ে থাকে। কোম্পানির প্রচারের জন্য আপনিও ভিডিও প্রচার করতে পারেন। টার্গেট অডিয়েন্সের ওপর ভিত্তি করে ভিডিও তৈরি করুন। এতে আপনার পণ্য বা কোম্পানি সম্পর্কে একসঙ্গে অনেক মানুষ জানতে পারবেন। 

এইচএকে/আরআর