আহমদ ফাইয়াজ। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ডটকমের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে কাজ করেছেন বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার বেশ কয়েকটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে। নিজের ক্যারিয়ার, বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতাসহ নানা বিষয় ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন তরুণ এই প্রযুক্তিবিদ।

ঢাকা পোস্ট: প্রথমেই শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।

আহমদ ফাইয়াজ: বড় হয়েছি ঢাকার মিরপুরের মনিপুরে। মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করি। এরপর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ২০১৪ সালে স্নাতক সম্পন্ন করি। স্নাতক শেষেই শুরু হয় চাকরির জন্য দৌড়ঝাঁপ। নিজের যোগ্যতায় পেয়েও যাই। সেসময় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। এরমধ্যে অগমেডিক্স ও নিউজক্রেড অন্যতম। পরে সিঙ্গাপুরে চলে যাই। সেখানে ইন্দোনেশিয়ান ট্রাভেলকা নামের একটি কোম্পানিতে মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করি। মূলত এরপরেই আসে মাহেন্দ্রক্ষণ। সিঙ্গাপুর থেকে সোজা লন্ডন। এখানে এসে অ্যামাজনের লন্ডন অফিসে যোগদান করি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।

ঢাকা পোস্ট: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশিরা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের সুযোগ তৈরি করে নিচ্ছে। হয়তো সংখ্যাটা কম। আপনি সেই কম সংখ্যক বাংলাদেশিদের একজন। অনুভূতি কেমন ?

আহমদ ফাইয়াজ: বাংলাদেশি গ্রাজুয়েটদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজের পরিমাণ দিনকে দিন বাড়ছে। সংখ্যার দিক দিয়ে কম হলেও বিষয়টি ইতিবাচক। সে হিসেবে একজন বাংলাদেশি হিসেবে অ্যামাজনে কাজ করতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

সাধারণত এ ধরনের বড় একটি কোম্পানিতে কাজ করে অনেক কিছু শেখা যায়। আমিও আমাজনে যোগ দিয়ে ওদের প্রোডাক্ট রিসার্স, ইউজার বিহেভিওর অ্যানালাইসিস করে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট করার বিষয়টি দেখছি। এক কথায় বলতে গেলে, ওদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি বেশ উচ্ছ্বসিত।

ঢাকা পোস্ট: অ্যামাজনের কাজের শুরুটা হলো কিভাবে?

আহমদ ফাইয়াজ: দীর্ঘদিন ধরেই আমি অ্যামাজনের বা সমমনা বড় কোম্পানিতে কাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুতি করছিলাম। বেশ কয়েকবার চাকরির জন্য আবেদন করে ইন্টারভিউয়ের শেষ ধাপে আটকে যাই। তবে দমে যাইনি, চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলাম। দীর্ঘদিনের চেষ্টা সফল হয়েছে গত বছর। মজার বিষয় হলও, আমি একই দিনে ফেসবুক ও অ্যামাজন থেকে অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার পেয়েছিলাম। পরে আমাজনেই যোগ দিই।

ঢাকা পোস্ট: অ্যামাজনের কাজের পরিবেশ সম্পর্ক জানতে চাই-

আহমদ ফাইয়াজ: করোনা মহামারির কারণে আমি অনলাইনে যোগদান করি। তারা জয়েনিং ডেটের ২-৩ দিন আগেই ল্যাপটপ ও অন্যান্য ইকুইপমেন্ট পাঠিয়ে দেয়। এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ভাবেই চলছে। বাসা থেকে কাজ করার জন্য চেয়ার টেবিলও কোম্পানি কিনে দিয়েছে।

এছাড়া কাজ করার পরিবেশ অন্য যেকোনো টেক কোম্পানির মতোই। ব্যতিক্রম শুধু কমিউনিকেশন নিয়ে। ছোট কোম্পানিগুলোর চেয়ে বড় কোম্পানির টিম বেশ বড়। তাই যোগাযোগের পরিধিও বেশ বড় করতে হয়। এ বিষয়টি আমাকেই দেখতে হচ্ছে। কারণ আমার কাজের উপর অনেকেই নির্ভরশীল। তবে অ্যামাজনে বেশ কিছু টুলস ও টেকনোলোজি ব্যবহার করা হয়, যা অন্যকোন কোম্পানিতে ব্যবহার করা হয় না। তাই প্রতিদিনই কিছু না কিছু শিখতেই হচ্ছে।

ঢাকা পোস্ট: বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের নাগরিক হয়ে আমাজনে কাজ করছেন, আপনার সহকর্মীরা বিষয়টা কিভাবে গ্রহণ করেছে?

আহমদ ফাইয়াজ: অ্যামাজন ডাইভার্সিটিতে বিশ্বাসী। এখানে অনেক দেশের নাগরিকরা কাজ করছেন। আমি এ পর্যন্ত  ভারতীয়, পাকিস্তানী, নাইজেরিয়ান, চাইনিজ, মিশরীয় এবং আরও অনেক দেশের লোকের সঙ্গে কাজ করেছি। এখানে এ বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। উল্টো সবাই অন্য দেশ, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহ দেখায়। এই যেমন আমার কলিগরা জানতো না হা-ডু-ডু  বলে একটা খেলা আছে, আবার আমি জানতাম না গ্রিক দের বিভিন্ন খাবার সম্পর্কে।

ঢাকা পোস্ট: কি কি বিষয় দেখাশোনা করছেন বর্তমানে-

আহমদ ফাইয়াজ: আমি অ্যামাজনের প্রাইম ভিডিওতে কাজ করি। আমার বর্তমান কাজ হচ্ছে কিছু নতুন ফিচার এর জন্য ডাটা ম্যানেজ করা। তাই ডাটা পাইপলাইন বানানো, ব্যাকএন্ড সার্ভিস বানানো নিয়ে আপাতত বেশি সময় দিচ্ছি।

ঢাকা পোস্ট: ই-কমাসের্র ধারণাটি বাংলাদেশও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেকেই এখন ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে অ্যামাজনের প্রোডাক্ট সোর্সিং করার পরিকল্পনা রয়েছে কি?

আহমদ ফাইয়াজ: আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। ই-কমার্সের জন্য নির্ধারিত টিম রয়েছে। বিষয়টি তারা বলতে পারবেন।

ঢাকা পোস্ট:  বর্তমানে অনেক তরুণই বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চাকরি করতে ইচ্ছুক। তাদের জন্য আপনার কোন পরামর্শ...

আহমদ ফাইয়াজ: আমি বলবো অ্যালগোরিদম, ডাটা স্ট্রাকচার কম্পিউটার সাইন্সের বেসিকটা ঠিকমত শিখতে হবে। বিদেশি কোম্পানিতে কাজ করতে চাইলে এসব জানার বিকল্প নেই। তাছাড়া প্রতিনিয়তই এখন নতুন নতুন টেকনোলজি আসছে। এ সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকতে হবে। ওপেন সোর্স কন্ট্রিবিউশন করতে পারলে আরও ভালো। একই সঙ্গে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আত্মবিশ্বাস থাকলে সব কিছুই সম্ভব।