বারবার প্রিলি ফেলের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। আমি এখানে আমার টানা ছয়টি বিসিএস প্রিলি পাশের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেয়ার করলাম-

১। কী জন্য পড়বেন সেটা ঠিক নেই। ফলে লক্ষ্যহীন পড়া খুব একটা কাজে আসে না এবং কিছু দিন পড়ার পর আর পড়ার স্পিডটা থাকে না। ফলে, লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই নিজেকে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মনে হয়।

২। বিসিএস সিলেবাস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকা। আপনি ভালো করে জানেনই না বিসিএস প্রিলির জন্য কোন কোন টপিক পড়তে হবে।

৩। বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকা। আপনি জানেনই না বিসিএস প্রিলিতে ঘুরেফিরে কোন প্যাটার্নে প্রশ্ন করে। এভাবে একটার পর একটা পরীক্ষা দিচ্ছেন আর ফেল করছেন।

৪। কী পড়বেন আর কী বাদ দিবেন সেটা বুঝে ওঠতে ওঠতেই পরীক্ষা চলে আসে। এরপর পরীক্ষার হলে গিয়ে কোনো কূল-কিনারা পান না

৫। পড়ালেখায় ধারাবাহিকতা না থাকা। আজ পড়লে পরের দিন আর পড়লেন না। কিংবা এক সপ্তাহ পড়লেন তো পরের দুই সপ্তাহ বইয়ের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই। এভাবে আপনার দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে।

৬। পড়ালেখায় যথাযথ কৌশল অবলম্বনের অভাব। কীভাবে পড়লে পড়া মনে বেশি রাখা যায় এবং পরীক্ষার হলে ভালো করা যায়, সেই কৌশল না জানা।

৭। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মাত্রারিক্ত ঘোরাফেরা ও আড্ডবাজি। সারাদিন আড্ডা ও ঘোরাফেরা করে ক্লান্ত হয়ে আর পড়তে ইচ্ছে করে না। পড়তে বসলেও পড়ায় পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া হয়।

৮। ফেইসবুক ও ইন্টারনেটে অধিক সময় ব্যয় করা। পড়তে বসলেই কিছুক্ষণ পড়ে ফেসবুকে নোটিফিকেশন দেখা, নিউজ ফিড দেখা আর বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটিং করতে গিয়ে আর পড়াটাই হয়ে ওঠে না।

৯। 'আজ না কাল পড়ব; কাল না পরশু পড়ব'- এমন করে পড়া জমিয়ে রেখে পরীক্ষার আগে বাড়তি চাপ নেয়া। তখন বাড়তি চাপ নিতে গিয়ে একসময় নিজেকে বোঝান 'এইবার এমনিতে পরীক্ষা দেই; আগামী বার ইনশাআল্লাহ ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিব'। কিন্তু সেই আগামীবার যে কবে আপনি নিজেও জানেন না।

১০। ২০০ নম্বরের প্রিলিতে ২০০ পাওয়ার টার্গেট নিয়ে পড়তে গিয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও কম গুরুত্বপূর্ণ সবকিছু পড়ে পরীক্ষার হলে তালগোল পাকিয়ে ফেলা।

১১। পরীক্ষার আগে বেশি বেশি সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পড়ে মাথা নষ্ট করা এবং অন্য বিষয়গুলোর ওপর কম জোর দেয়া। কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখেন সাম্প্রতিক বিষয়ের উপর কেবল ৩-৪ নম্বর কমন এসেছে!

১২। সাল, তারিখ ও গুরুত্বপূর্ণ নামগুলো বার বার খাতায় না লিখে পড়ে কেবল চোখ ভুলিয়ে পড়া। ফলে, পরীক্ষার হলে সাল আর তারিখের উত্তর করতে গিয়ে কনফিউজড হয়ে যান আর বার বার ভুল উত্তর করে ফেলেন বেশি।

১৩। পরীক্ষার আগের রাতে অধিক চাপ নিয়ে বেশি পড়া এবং পরীক্ষার আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। ফলে, পরীক্ষার হলে মাথা আর ভালোভাবে কাজ করে না। মনে হয়, কিছুই পড়েন নি; কমন প্রশ্নের উত্তরও মনে করতে পারেন না!

১৪। পরীক্ষার দিন পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বের না হয়ে পরে মাত্রারিক্ত মানসিক চাপ অনুভব করা। এই মানসিক চাপে পারা জিনিসও ভুলে যান।

আরও পড়ুন: শূন্য থেকে কীভাবে নেবেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি?

১৫। পরীক্ষার হলে সঠিকভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট না করে প্রথমদিকে ঢিলামি করে শেষের দিকে বেশি তড়িঘড়ি করে উত্তর ভুল দাগানো।

১৬। পরীক্ষার হলে কঠিন কোনো বিষয় দিয়ে পরীক্ষা শুরু করতে গিয়ে মাথা গরম করে ফেলা। ফলে, পরে আর সহজ বিষয়গুলোর উত্তরও ঠিকঠাক মতো দিতে পারেন না!

১৭। ২০০ নাম্বারের প্রিলিতে ১৭০-১৮০ পাওয়ার জন্য কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর করতে গিয়ে নেগেটিভ নাম্বার বেশি পাওয়া। ফলে আর পাশ নাম্বারও থাকে না।

১৮। ঘড়িতে সময় ধরে বাসায় বেশি বেশি মডেল টেস্ট না দিয়ে পরীক্ষার হলে প্রশ্ন দেখে অস্থির হয়ে ওঠেন। পরীক্ষার আগে বাসায় বেশি বেশি মডেল টেস্ট দিতে দিয়ে সেই ভীতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠতে পারতেন।

১৯। যে বিষয়ে আপনি দুর্বল সেই বিষয়ে দুর্বলতা না কাটিয়ে পরে পড়বেন বলে রেখে দিয়ে বার বার একই দুর্বলতা নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে নিজেকে আত্মবিশ্বাসহীন মনে করা।

২০। কোনো বিষয় পড়তে গেলে কনসেপ্ট ক্লিয়ার না করে,  কেবল মুখস্থ করা। মুখস্থ করা জিনিস পরীক্ষায় হুবহু কমন না পেলে আর উত্তর করতে পারেন না।

২১। পরীক্ষা সম্পর্কিত সাবজেক্টগুলোর বেসিক স্ট্রং না করা। ভাসাভাসা জ্ঞানের কারণে পরীক্ষায় প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে দিলেই আর সঠিকভাবে উত্তর করতে পারেন না।

২২। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সঠিক বই সিলেকশন না করে এমন কিছু বই সিলেকশন করা, যেগুলো আপনার উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে থাকে। যেমন- কেউ অসুস্থ হলে সঠিক ওষুধ খেলে সেরে ওঠতে পারে; কিন্তু ভুল ওষুধ খেলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে; এমন কি মৃত্যুর মতো অবস্থাও তৈরি হতে পারে!

আপনার ভিতরে যদি উপরের এই বিষয়গুলোর কোনো একটি থাকে, তাহলে তা দূর করার জন্য আজই সচেষ্ট হোন। শুভ কামনা ও দোয়া রইল সকল সৎ পরিশ্রমীর জন্য।

লেখক : ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার, সাবেক সিনিয়র অফিসার (পূবালী ব্যাংক লিমিটেড), প্রতিষ্ঠাতা : BCS Technique (বিসিএস স্পেশাল প্রাইভেট প্রোগ্রাম), লেখক : BCS Preliminary Analysis (বাংলাদেশের প্রথম সাজেশন ভিত্তিক বিসিএস প্রিলির পূর্ণাঙ্গ বই), প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis (বাংলাদেশের প্রথম সাজেশন ভিত্তিক প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ বই)।