ভালো প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সহজেই শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে চান অনেকেই। কিছু ভুলের কারণে একজন প্রেজেন্টার যথার্থভাবে তার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করতে পারেন না। কীভাবে ভালো প্রেজেন্টেশন দেওয়া যায়? এই কৌশলগুলো ‍নিয়েই আজকের আয়োজন-

লেখা কম, কথা বেশি

অনেকেই মনে করেন, স্লাইডে যত লেখা থাকবে প্রেজেন্টেশন তত আকর্ষণীয় হবে। ‍কিন্তু এই ধারণা ঠিক নয়। কারণ স্লাইডে লেখা বেশি হলে শ্রোতারা প্রেজেন্টেশনের প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন না। একজন প্রেজেন্টারের কাজ হচ্ছে স্লাইডে অল্প লেখা ও ছবির সাহায্যে শ্রোতাদের সামনে একটি বিষয় উপস্থাপন করা। অর্থাৎ পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের মধ্য দিয়ে প্রেজেন্টার তার প্রেজেন্টেশনটি শ্রোতাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলেন।

১. প্রেজেন্টেশন শুরুর সময় প্রেজেন্টারকে বিষয় সম্পর্কে শ্রোতাদের স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।

২. প্রেজেন্টেশনের বিষয়বস্তু শ্রোতাদের বোধগম্য হতে হবে। কারণ যারা আপনার প্রেজেন্টেশন শুনছেন, তারা গভীরভাবে চিন্তা করতে পারেন না।

৩. প্রাসঙ্গিক থাকুন। যে বিষয় নিয়ে কথা বলছেন, তার সঙ্গে সঙ্গতি নেই এমন কোনো বিষয়ে কথা বলবেন না।

৪. ১০টির বেশি স্লাইড রাখবেন না। অতিরিক্ত স্লাইডের কারণে শ্রোতাদের মনোযোগ ব্যাহত হয়ে যেতে পারে।

বার বার একই বিষয় উল্লেখ করবেন না

প্রেজেন্টেশনের সময় অনেকেই বার বার একই বিষয় উল্লেখ করেন। এমনটি করলে প্রেজেন্টারের কথা কেউ শুনবে না। প্রেজেন্টারকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে শ্রোতারা তার কথা শুনছেন কি না। শ্রোতাদের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখাই তার কাজ। বার বার একই বিষয় উল্লেখ করলে শ্রোতারা আকৃষ্ট হন না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি স্লাইডে অন্তত ৬টি শব্দ লেখা এবং সেগুলো তথ্যবহুল হতে হবে।

স্লাইড উজ্জ্বল করুন

চকচকে জিনিসের প্রতি সব মানুষই আকৃষ্ট হন। প্রেজেন্টেশনের সময় শ্রোতাদের মনোযোগ ধরে রাখতে স্লাইড উজ্জ্বল করা উচিত। স্লাইডে ছবি কিংবা ভিডিও রাখা যেতে পারে। বিষয় ও প্রসঙ্গের সঙ্গে মিল রেখে ছবি কিংবা ভিডিও দিলে শ্রোতারা শেষ পর্যন্ত প্রেজেন্টেশনটি শুনবেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রেজেন্টশনের স্লাইডগুলো যথাসম্ভব রঙিন, ফন্ট সাইজ স্পষ্ট ও উপযুক্ত ফরম্যাট রাখা জরুরি। এতে শ্রোতাদের আগ্রহ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব হবে। গ্রাফ, চার্ট দিয়ে কোনো প্রেজেন্টেশনের ফরমেট তৈরি হলে শ্রোতারা আগ্রহী হয়।

ব্যাকরণের ভুল করবেন না

প্রেজেন্টেশনে শব্দ, বাক্য কিংবা উচ্চারণ ভুল হলে শ্রোতারা তাতে মনোযোগ দিতে চান না। তাই স্লাইডে যা লিখবেন, সেগুলোর ব্যাকরণ জেনে নিন। আর বানানের ব্যাপারে আপনাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। ব্যাকরণ বা বানানের সমস্যার কারণে পুরো প্রেজেন্টেশন নষ্ট হয়ে যায়।

ভূমিকায় থাকুন স্বচ্ছ

প্রেজেন্টেশনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখান থেকেই শ্রোতারা মূল বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেয়ে থাকেন। সেই কারণে ভূমিকা বলার সময় স্বচ্ছ থাকা জরুরি।

প্রেজেন্টেশনে নতুনত্ব রাখুন

গল্প বলার মাধ্যমে প্রেজেন্টেশনকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। এতে প্রেজেন্টেশনে নতুনত্ব থাকে। কোনো একটি প্রসঙ্গে কথা বলার সময় সেই ব্যাপারে কোনো গল্প বললে শ্রোতারা প্রেজেন্টেশনের প্রতি আগ্রহী হবেন।

প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখুন

অনেকেই প্রেজেন্টেশনের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে হিমশিম খান। প্রাসঙ্গিকতা না থাকলে শ্রোতারা আপনার প্রেজেন্টেশনের প্রতি আকৃষ্ট হবেন না। যে বিষয়ে আপনি কথা বলছেন, কোনোভাবেই সে বিষয়ের বাইরে যাবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখার জন্য প্রেজেন্টারকে স্পষ্টভাষী এবং অল্প সময়ে বেশি কথা বলায় পারদর্শী হতে হবে।

উপসংহারে শ্রোতাদের সম্পৃক্ত করুন

ভূমিকার মতো উপসংহারও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ প্রেজেন্টার উপসংহারে কেবল ‘ধন্যবাদ’ দিয়েই শেষ করেন। এতে শ্রোতারা আকৃষ্ট হতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘ধন্যবাদ’ না লিখে শ্রোতাদের কোনো প্রশ্ন আছে কি না সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। এর ফলে আপনার প্রেজেন্টেশনটি ফলপ্রসূ হবে।

এইচএকে/টিএম